নিরক্ষীয় অঞ্চলে সৌরশক্তির এক অনন্ত সম্ভাবনা

নিরক্ষীয় অঞ্চলে সৌরশক্তির এক অনন্ত সম্ভাবনা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ আগষ্ট, ২০২৩

নিরক্ষরেখার কাছাকাছি শান্ত সমুদ্রে ভাসমান সৌর প্যানেলের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পশ্চিম আফ্রিকার ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোতে সীমাহীন সৌর শক্তি জোগানোর এক বিশাল সম্ভাবনা গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশানাল ইউনিভার্সিটির গবেষণা বলছে শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়ায় উপকূল থেকে বছরে প্রায় ৩৫০০০ টেরাওয়াট-ঘন্টা (TWh) সৌর শক্তি উৎপন্ন হতে পারে, যা বর্তমান বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ উৎপাদনের (৩০০০০ TWh প্রতি বছর) সমান। বিশ্বের বেশিরভাগ মহাসাগরে নানা ধরনের ঝড় হয়, কিন্তু সে তুলনায় নিরক্ষরেখার কিছু অঞ্চল তুলনামূলকভাবে শান্ত । তাই অপেক্ষাকৃত সস্তা প্রকৌশল কাঠামো, উপকূলে ভাসমান সৌর প্যানেলগুলো রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট। গবেষকদের বক্তব্য নাইজেরিয়ার কাছে ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এবং নিরক্ষীয় পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে ভাসমান সৌর প্যানেল হওয়ার সর্বাধিক সম্ভাবনা রয়েছে৷
২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্ব অর্থনীতিতে মূলত সৌর ও বায়ু শক্তি দ্বারা বিদ্যুতায়ন হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। প্রায় ৭০ বর্গ কিলোমিটারের সৌর প্যানেল এক মিলিয়ন ধনী, মধ্যবিত্ত মানুষের প্রয়োজনীয় সমস্ত শক্তি সরবরাহ করতে পারবে তাই নয় তা কার্বন নির্গমন শূন্য হবে। প্যানেলগুলো বাড়ির ছাদে, শুষ্ক অঞ্চলে, কৃষি ক্ষেত্রে থাকতে পারে বা জলাশয়েও ভাসতে পারে।
নাইজেরিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো উচ্চ জনসংখ্যার দেশগুলিতে সৌর শক্তি সংগ্রহের জন্য জায়গা সীমিত, আবার সমুদ্রের “ডলড্রাম” অক্ষাংশে তাদের বায়ুশক্তি দুর্বল হওয়ার জন্য বায়ুচালিত শক্তি কার্যকরী হবে না। কিন্তু এই দেশগুলো তাদের শান্ত নিরক্ষীয় সমুদ্রে ভাসমান সৌর প্যানেল থেকে কার্যকরীভাবে সীমাহীন শক্তি সংগ্রহ করতে পারে৷ ভাসমান সৌর প্যানেল দেশের আভ্যন্তরীণ হ্রদ এবং জলাশয়েও স্থাপন করা যেতে পারে, তাই এই দেশগুলোতে ভাসমান সৌরশক্তির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এই অঞ্চলে বড়ো তরঙ্গ নেই বা শক্তিশালী বাতাসও বয় না। তাই এই অঞ্চলে ভাসমান সৌর প্যানেলে রক্ষার জন্য শক্তিশালী এবং ব্যয়বহুল প্রকৌশলের প্রয়োজন হয় না। গবেষকরা বলছেন, সমুদ্রের যে অঞ্চলে ৬ মিটারের চেয়ে বড়ো তরঙ্গ বা সেকেন্ডে ১৫ মিটারের বেশি শক্তিশালী বাতাস বয় না সেগুলো প্রতি বছর এক মিলিয়ন TWh বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে। সামুদ্রিক ভাসমান সৌর প্যানেল ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে জটিলতা হতে পারে তাও নিরসন করতে পারে।
তাই গবেষকরা বলছেন, ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের আশেপাশে এবং নাইজেরিয়ার কাছে গিনি উপসাগর এই সৌর প্যানেলের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত অঞ্চল। উপকূলীয় সৌর প্যানেলে লবণজনিত ক্ষয় এবং সমুদ্রের জন্য ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এক্ষেত্রে সামুদ্রিক পরিবেশ এবং মাছ ধরার ক্ষতি কমাতেও সতর্ক মনোযোগ দিতে হবে। বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য বায়ু এবং সমুদ্র তরঙ্গ পরিবর্তন হতে পারে। তবুও গবেষকদের আশা শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, এই দেশগুলোর প্রায় এক বিলিয়ন মানুষ বেশিরভাগই সৌর শক্তির উপর নির্ভর করবে, যা ইতিহাসে প্রচলিত শক্তি থেকে অপ্রচলিত শক্তিতে রূপান্তরের এক উদাহরণ হয়ে থাকবে।