বিলুপ্ত হাতির পুনর্জন্ম দিচ্ছে বিজ্ঞান!

বিলুপ্ত হাতির পুনর্জন্ম দিচ্ছে বিজ্ঞান!

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৭ অক্টোবর, ২০২১

এইচ জি ওয়েলস তো এরকমই স্বপ্ন দেখতেন। টাইম মেশিন তৈরি হয়েছে আর তাতে চেপে মানুষ অতীতে ফিরে যেতে পারছে। পৃথিবীর বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া মানব সভ্যতা, প্রাণীকূল, উদ্ভিদকূলকে চাক্ষুষ করতে পারছে। সম্প্রতি একটি মার্কিন আইটি কোম্পানি, নাম কলোসাল। মানুষকে তারা ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ১১ হাজার বছর আগে! টাইম মেশিন তারা তৈরি করছে না। কিন্তু ১১ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এক প্রজাতির হাতিকে তারা বর্তমান মানবসভ্যতায় ফিরিয়ে আনতে চলেছে।
হাতিটিকে বলা হত ‘আর্কটিক এলিফ্যান্ট’ বা উলি ম্যামথ। ম্যামোফান্ট-ও বলা হত তাকে। দৈত্যাকৃতি এই হাতি ছিল পুরোটা পশমে ঢাকা। মূলত মেরু অঞ্চল জুড়ে ছিল তাদের বাস। বরফের ঠাণ্ডাতেও যাতে শীত না লাগে তাই তাদের গা থাকত পশমে ঢাকা। বিশাল ছিল তাদের দাঁত জোড়া। ১.৮ মিলিয়ন বছর আগের প্লাইসটন যুগের প্রাণী ছিল তারা। তাদের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সময় বিজ্ঞানীরা বলছেন ১১ হাজার ৭০০ বছর। কোম্পানির হয়ে যে বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন তাদের অন্যতম হাভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের এক জেনেটিসিস্ট জর্জ চার্চ। তিনি জানিয়েছেন, সিআরআইএসপিআর প্রযুক্তির সহায়তায় আর্কটিক এলিফ্যান্টের ৫০ রকমের শারীরিক বৈশিষ্ট্য জিনের আকারে ঢোকানো হবে বর্তমানের এশীয় হাতির শরীরে। তাতে হাতির আকার, আকৃতি এবং চরিত্র, সবই ম্যামোফ্যান্টের মত হয়ে যাবে! জিন সেটা করবে। সেখান থেকে তৈরি হবে আর্কটিক এলিফ্যান্টের ভ্রুণ। ১৮ থেকে ২২ মাসে বর্তমানের পরীক্ষিত হাতি গর্ভধারণ করবে। জন্ম নেবে হাইব্রিড ‘আর্কটিক হাতি!
কিন্তু কলোসাল এখন কেন এই হাতিকে ফেরাতে চাইছে। জর্জ চার্চ বলেছেন, তাদের প্রধান উদ্দেশ্য, পৃথিবীর যে সমস্ত অঞ্চলে, মূলত মেরু অঞ্চলগুলোর যে তুন্দ্রা জঙ্গল ছিল সেখানকার ঝোপঝাড় সরিয়ে আবার ন্যাচারাল গ্রাসল্যান্ড তৈরি করা। সেই কাজ করবে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এই হাতি! ন্যাচারাল গ্রাসল্যান্ড তৈরি করতে পারলে, বিজ্ঞানীদের আশা তাতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন এখনকার চেয়ে অনেক কমবে। জর্জ চার্চ আরও জানিয়েছেন, পৃথিবীর মেরু অঞ্চলগুলিতে যে তুন্দ্রা জঙ্গলগুলি রয়েছে সেগুলোর অধিকাংশ শ্যাওলা বনে পরিণত হয়েছে! বিজ্ঞানীদের আশা, সেই তুন্দ্রা জঙ্গলগুলিতে আর্কটিক এলিফ্যান্ট ছেড়ে দিলে শ্যাওলা বন আবার ফিরে আসবে তুন্দ্রার পুরনো বৈশিষ্ট্য, মানে ঝোপঝাড়, আগাছার জঙ্গলে। তাতে শুধু পরিবেশের ইকোসিস্টেম ফিরবে না, আবহাওয়ার যে পরিবর্তনে আজ বিশ্ব জুড়ে উষ্ণায়ন, যার ভয়াবহ উপস্থিতিতে প্রাকৃতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যাকে প্রতিরোধ করার ভাবনা নিয়ে এমাসেই গ্লাসগোয় বসছেন রাষ্ট্রপ্রধানরা, সেই আবহাওয়ায় কিছুটা হলেও স্থিতিশীলতা আসবে বলে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী।
আগামী ৪ থেকে ৬ বছরের মাথায় পৃথিবী আবার দেখতে পাবে ১১ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া উলি এলিফ্যান্টকে। কলোসাল কোম্পানির তরফে জানানো হয়েছে আপাতত পরিকল্পনা, ১০০টি ‘আর্কটিক এলিফ্যান্টের’ জন্ম দেওয়া। বাস্তবায়িত হোক তাদের এই বৈপ্লবিক প্রচেষ্টা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 + 18 =