মঙ্গলগ্রহে উল্কার বোমাবর্ষণ

মঙ্গলগ্রহে উল্কার বোমাবর্ষণ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২ জুলাই, ২০২৪

কিছু গ্রহে বোমাবর্ষণের মতো উল্কাপিণ্ড আছড়ে পড়তে থাকে। মঙ্গল গ্রহে সিসমোমিটার থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে মহাকাশীয় শিলাগুলো লাল গ্রহেও ঘন ঘন আছড়ে পড়ে। মার্স ইনসাইট ল্যান্ডারের আশেপাশে কম্পনজনিত প্রভাবের সংখ্যার ভিত্তিতে, বিজ্ঞানীদের অনুমান মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে বাস্কেটবল আকারের শিলা প্রায় প্রতিদিনই আছড়ে পড়ে। চার বছরে ধরে ২০২২ সাল অবধি মার্স ইনসাইট মঙ্গলগ্রহের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষণ করেছে, যা এই লাল গ্রহ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের বোঝার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে। সুইজারল্যান্ডের ETH জুরিখের প্ল্যানেটারি সায়েন্টিস্ট জেরালডিন জেনহাউসর্ন বলেছেন, এই হার শুধুমাত্র অরবিটাল ইমেজ, অর্থাৎ স্যাটেলাইটের আনুমানিক সংখ্যার চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ বেশি। বিজ্ঞানীদের আগে ধারণা ছিল মঙ্গলগ্রহ নিশ্চুপ, সেখানে কোনো স্পন্দন নেই, কিন্তু মার্স ইনসাইট ল্যান্ডার, এখানে টেকটোনিক এবং ম্যাগম্যাটিক কার্যকলাপ প্রকাশ করেছে, পাশাপাশি গ্রহের অভ্যন্তরীণ গঠনও প্রকাশ করেছে।
পৃথিবীতে, প্রতি বছর হাজার হাজার উল্কা পড়ে, কিন্তু তারা বেশিরভাগই বায়ুমণ্ডলে উঁচুতে পুড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।। মঙ্গল গ্রহেরও বায়ুমণ্ডল রয়েছে, তবে তা পৃথিবীর চেয়ে ১০০ গুণ বেশি পাতলা। তার মানে মঙ্গল গ্রহের উল্কার বিরুদ্ধে সুরক্ষা কম আর নানা শিলা মহাকাশ থেকে প্রায় নির্বিঘ্নে সেখানে পড়তে পারে। তাছাড়া মঙ্গলগ্রহের কক্ষপথ এবং বৃহস্পতির কক্ষপথ গ্রহাণু বেল্টের খুব কাছাকাছি, তাই আশেপাশে প্রচুর শিলা রয়েছে, যা মঙ্গল গ্রহে সরাসরি আঘাত করতে পারে। মঙ্গলগ্রহে আগে এই উল্কাপাত উপগ্রহ চিত্রের ওপর নির্ভর করে হিসেব করা হত। মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটগুলো নতুন গর্তের উপস্থিতি দেখে গ্রহের পৃষ্ঠের চলমান ছবি তোলে। এটা বিশেষ নির্ভুল ও উপযোগী নয়, কিন্তু ইনসাইট এখনও অবধি সেরা বিকল্প ছিল। ইনসাইট থেকে প্রকাশিত প্রতিদিন প্রায় একটা হারে প্রতি বছর মঙ্গল গ্রহে ২৮০ থেকে ৩৬০ টা উল্কাপাত ৮ মিটারের চেয়ে বড়ো গর্ত তৈরি করে। আরে মাসে অন্তত একবার উল্কাপাতে ৩০ মিটারের চেয়ে বড়ো গর্ত তৈরি হয়। এই তথ্য শুধুমাত্র মঙ্গল গ্রহের ইতিহাস বোঝার জন্য প্রাসঙ্গিক নয়, এই লাল গ্রহে মানুষের অন্বেষণে সাহায্যের জন্যও এটা মূল্যবান তথ্য প্রদান করবে। এই ফলাফল নেচার অ্যাস্ট্রোনমি -তে প্রকাশিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × one =