মস্তিষ্কর স্মৃতি -নক্ষত্র

মস্তিষ্কর স্মৃতি -নক্ষত্র

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ জুন, ২০২৫

আমাদের স্মৃতি কীভাবে কাজ করে? ঠিক কোন চেতনার খেলায় একবার দেখা কোনো মুখ আমাদের চেনা লাগে কিংবা গুনগুনিয়ে উঠি পুরনো কোনো গান কিংবা নাকে লেগে থাকে ছোটবেলার ঘ্রাণ? এম আই টি-র গবেষকেরা এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে এক আশ্চর্য আবিষ্কারের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন-‘অ্যাস্ট্রোসাইট’। ‘অ্যাস্ট্রোসাইট’ নামটি এসেছে গ্রিক শব্দ astro (তারকা) থেকে। অ্যাস্ট্রোসাইট হলো মস্তিষ্কের এমন এক ধরনের কোষ যাদের গঠন অনেকটা আকাশের তারার মতন। এতদিন ধরে বিজ্ঞানীরা ভেবেছেন, এগুলি শুধুই স্নায়ু কোষের সংযোগ সাধন করে। মানে এরা কেবল মস্তিষ্কর পরিবেশ ঠিক রাখার কাজ করে। কিন্তু এই নতুন গবেষণা বলছে, এই তারারা শুধু আলো ছড়ায় না, এরা স্মৃতি গড়ার কারিগরও বটে! স্নায়ুবিজ্ঞানী মার্ক হ্যানফোর্ড বলেন,“আমরা এতদিন ধরে ভুল জায়গায় খুঁজছিলাম। আসল খেলোয়াড়রা আমাদের চোখের সামনেই ছিল অথচ আমাদের চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল।” গবেষক দলটি বিশেষ ত্রিমাত্রিক চিত্রায়নের মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কে অ্যাস্ট্রোসাইটের ক্রিয়াকলাপ পর্যবেক্ষণ করে দেখেন, এই কোষগুলো সরাসরি নিউরনের সঙ্গে ‘কথা বলে’ এবং এই কথোপকথনের মাধ্যমেই স্মৃতি তৈরি হতে পারে। তারা শুধু সংকেত সরবরাহ করে না, নিজেরাই ছক এঁকে দেয়। “অ্যাস্ট্রোসাইটগুলি, মস্তিষ্কের মধ্যে লুকিয়ে থাকা একেকটা স্থপতির মতন নিউরনের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।” এর আগেকার গবেষণায় নিউরনকে একমাত্র স্মৃতি-বাহক হিসেবে দেখা হত। কিন্তু এই আবিষ্কার এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে স্মৃতির প্রক্রিয়ায় এত পার্থক্য কেন, তার এক চাবিকাঠিও হয়তো এই অ্যাস্ট্রোসাইটই! গবেষণায় দেখা যায়, মানুষের অ্যাস্ট্রোসাইটগুলো অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় অনেক বেশি জটিল। তারা আকারে বড় এবং আরও বেশি শাখা-প্রশাখা নিয়ে বিস্তৃত, একই সময়ে বহু নিউরনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সক্ষম। এই আবিষ্কার শুধু স্নায়ুবিজ্ঞানের জন্য নয়, স্মৃতিভিত্তিক রোগ যেমন আলঝেইমার বা পারকিনসন গবেষণার জন্যও এক বড় আশার আলো। ভবিষ্যতে যদি অ্যাস্ট্রোসাইটকে নিয়ন্ত্রণ বা সংশোধন করা যায়, তাহলে হয়তো স্মৃতি ধরে রাখা বা ফিরিয়ে আনার নতুন পথ বাতলে যাবে। সুতরাং এতদিন যাদের ‘পিছনের সারির উপাদান’ ভেবে আসা হচ্ছিল সেই নক্ষত্র-আকৃতির কোষগুলির মধ্যেই হয়তো লুকিয়ে আছে আমাদের অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতের চালচিত্র !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 − 13 =