মাইক্রোওয়েভ ‘নিরাপদ’ প্লাস্টিক কী আদৌ নিরাপদ, সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা

মাইক্রোওয়েভ ‘নিরাপদ’ প্লাস্টিক কী আদৌ নিরাপদ, সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ আগষ্ট, ২০২৩

প্লাস্টিকের পাত্রে মাইক্রোওয়েভে খাবার গরম করার সময় সেই পাত্র থেকে কোটি কোটি ন্যানোমিটার-প্রশস্ত কণা সেই খাবারের সাথে মিশে যায়- এনভাইরনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় এমনটাই বলছেন বিজ্ঞানীরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা-লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক, পলিপ্রোপিলিন এবং পলিথিন থেকে তৈরি শিশুর খাবারের পাত্র ব্যবহার করে পরীক্ষা করেন। এই পলিপ্রোপিলিন এবং পলিথিন উভয়ই ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) নিয়ন্ত্রকদের দ্বারা ব্যবহারের জন্য নিরাপদ হিসাবে অনুমোদিত। গবেষকরা প্রথমে পাত্রে রাখা বিভিন্ন তরল ১০০০-ওয়াটের মাইক্রোওয়েভে তিন মিনিটের জন্য গরম করেন তারপর সেই পাত্রে রাখা বিভিন্ন তরলের মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক (এক মিলিমিটারের ব্যাসের অন্তত ১/১০০০ ভাগ) এবং ন্যানোপ্লাস্টিকের (আরো ছোটো) উপস্থিতি বিশ্লেষণ করেন। গবেষকরা অনুমান করেছেন যে মাইক্রোওয়েভে তিন মিনিট গরম করার পর প্লাস্টিকের পাত্রের মাত্র এক বর্গ সেন্টিমিটার থেকে ৪.২২ মিলিয়ন মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ২.১১ বিলিয়ন ন্যানোপ্লাস্টিক কণা নির্গত হতে পারে।
গবেষকদের মতানুসারে জল বা দুগ্ধজাত খাবার পলিপ্রোপিলিন বা পলিথিন পাত্রে রেখে মাইক্রোওয়েভে গরম করলে প্লাস্টিক কণার আপেক্ষিক ঘনত্ব সব চেয়ে বেশি দেখা গেছে। খাবার এবং পানীয়গুলো যখন ফ্রিজে রাখা হয় বা ঘরের তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয় তখনও প্লাস্টিক কণা নির্গত হয়, তবে সংখ্যায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। তবে এই মাইক্রোস্কোপিক প্লাস্টিক কণা আমাদের কী ক্ষতি করছে তা এখনই পরিষ্কার নয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে তারা সম্ভাব্যভাবে অন্ত্র এবং আমাদের শরীরের জৈবিক প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই এটা বলা যায় যে আমরা যত কম প্লাস্টিক পাত্র ব্যবহার করি ততই ভালো। গবেষক দ্বারা উৎপন্ন ভ্রূণের কিডনি কোশকে পাত্রে নির্গত ঘনত্বের প্লাস্টিক কণার সংস্পর্শে রেখে দেখা গেছে যে ৭৭% কিডনি কোশ প্লাস্টিকের সর্বোচ্চ মাত্রার সংস্পর্শে এসে বিনষ্ট হয়েছে। এই প্লাস্টিকের কণাগুলো শরীরে প্রবেশ করার পরে কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে তা দেখার জন্য আরও বিশদ গবেষণা এবং পরীক্ষার প্রয়োজন, তবে এটা স্পষ্ট যে আমাদের খাবার রাখার জন্য প্লাস্টিকের উপর আমাদের নির্ভরতা অত্যন্ত ক্ষতিকারক হিসেবে প্রতিপন্ন হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − 8 =