এখন প্যানডেমিক কথাটার সঙ্গে সকলেই কম-বেশি পরিচিত। প্যানডেমিক কথাটা মানুষের শারীরিক বিপর্যয় সংক্রান্ত। অন্যদিকে আর্থ-সামাজিক পরিসরে তথ্যের অধিকার নিয়ে সচেতন মানুষের মধ্যে কথাবার্তা চলে। কিন্তু এই তথ্যের বিচ্যুতিও যে নানা ধরনের অসুখে মানুষকে পৌঁছে দিতে পারে সেই খবরটা অনেকেরই অজানা। সেই কারণে ভুয়ো তথ্য বা ভুয়ো খবরও যে মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে পর্যুদস্ত করতে পারে – সেই কথাটা বোঝানোর জন্য এখন একটা কথা চালু হয়েছে, ইনফোডেমিক।
যেমন, জনপ্রিয় এক টিভি চ্যানেল ‘ভাইরাল’ নামক অনুষ্ঠানে যে-সমস্ত চুটকি খবর পরিবেশন করেন, মানুষ সেগুলো দেখতে খুব ভালোবাসেন এবং সেগুলোকে অনেকেই খবর বা তথ্য হিসেবে ধরে নেন। এখন আপনাকে বোঝানো শক্ত কোন খবরটা ভুয়ো আর কোন খবরটা সঠিক। অনেক ক্ষেত্রে খবরটা হয়তো সম্পূর্ণ ভুয়ো নয়। ইষৎ বিচ্যুত বা বিকৃত। ওইটুকু বিচ্যুতিতেই ফ্যাক্টের সঙ্গে তার খবরের আকাশ-পাতাল তফাৎ হয়ে যায়। শুধু কি তাই, হয়-কে-নয় করে দেওয়া খবরও হুদো হুদো বিলোচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এমনকি রাষ্ট্রপুঞ্জের লেটারহেড নকল করেও খবর বেরোচ্ছে। হু-এর নাম দিয়ে খবর বেরোচ্ছে। ইউনেসকো জানিয়েছে: During this coronavirus pandemic, ‘fake news’ is putting lives at risk। ইউনেসকো এই ভুয়োখবর ছড়ানোর এই ব্যাপকতাকে বলছে “ইনফোডেমিক”। অন্যদিকে ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকার হেডলাইন দেখুন: News is under threat। যে সোশ্যাল মিডিয়া, বা অনলাইন সোর্সগুলো নিয়ে আপনি মন্ত্রমুগ্ধের মতো তথ্য-প্রযুক্তির জয়গান করেন – সেই অনলাইন সোর্স, সেই সোশ্যাল মিডিয়াগুলোই আপনাকে হরদম ঠকাচ্ছে। একটা হিসেব দিয়ে শেষ করি, প্যান আমেরিকান জার্নাল অফ পাবলিক হেল্থের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ভুয়ো খব পরিবেশিত হয় ফেসবুক এবং হোয়াটসআপের মাধ্যমে। তার মধ্যে ২০.১% রাজনৈতিক খবর, ১৯.৫% অতিমারি সংক্রান্ত খবর, ১৬.১% অতিমারি মোকাবিলা করবার তরিকা সংক্রান্ত খবর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, হু এবং বিখ্যাত নেচার পত্রিকাতেও এই ইনফোডেমিককে গুরুত্ব সহকারে দেখার কথা বলা হচ্ছে।