ম্যানগ্রোভ ও সুন্দরবনের কথা/১২

ম্যানগ্রোভ ও সুন্দরবনের কথা/১২

রথীন মণ্ডল
Posted on ৪ ডিসেম্বর, ২০২১

সবার বন্ধু, নাম তার ত্বরা

সবার পাশে, সবার সাথে, সবার মাঝে,
সুন্দরবনে থাকি আমি খোস মেজাজে।

ত্বরা একটি ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ। এদেরকে সুন্দরবনের সব জায়গায়, সব গাছের সাথে, এবং সব গাছের মাঝে দেখা যায়। এটি গুল্ম জাতীয় গাছ এবং সংখ্যায় অনেক হয়। এই প্রজাতির গাছগুলো সম-উচ্চতার হয়ে থাকে। এরা যেখানে জন্মায়, সেখানে গাছের উপরিতলের এক অনন্য সৌন্দর্য চোখে পড়ে। এরপর বাড়তি শোভা পায়, যখন সাদা ফুলের সারি গাছের ডগাতে প্রস্ফুটিত হয়। বসন্তে ফুল ফোটে। মৌমাছি এবং ভ্রমর পরাগ যোগ ঘটায়। এদের ফলগুলো একটু লম্বাটে হয়। ফলের গায়ে উঁচু ও নিচু সমান্তরাল দাগ উপর থেকে নিচ পর্যন্ত বিন্যস্ত। এদের বীজের অঙ্কুরোদগম কে ‘ক্র্যপতো -ভিভিপেরি’ বা লুকনো জরায়ুজ অঙ্কুরদ্গম বলে। অঙ্কুরিত বীজ ফলের মধ্যে লুকনো থাকে। অনুকূল পরিবেশে, অর্থাৎ বর্ষার জলে মাটিতে লবণের পরিমাণ কমতে থাকলে, এরা ফল থেকে বেরিয়ে আসে এবং নিজেদের আত্মপ্রকাশ করে। সুন্দরবনে ত্বরার চারাগাছ প্রচুর পরিমাণে দেখতে পাওয়া যায়।
ত্বরার পত্র ফলক গোল আকৃতির হয়। পত্র ফলকের তুলনায় পত্র দণ্ডটি দিগুণ বেশি লম্বা হয়। পত্র দণ্ডটির নীচের দিকটি খাপ তৈরি করে কাণ্ডকে আবৃত করে রাখে। এদের কাণ্ডের নিচের দিকটি গম্বুজাকৃতির হয়। অর্থাৎ কাণ্ডের নীচটি মোটা হয় এবং ক্রমশঃ এটি উপরের দিকে সরু হতে থাকে।
সুন্দরবনের শুরুতে এবং গভীর জঙ্গলে এদেরকে জন্মাতে দেখা যায়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মাটিতে লবণের পরিমাণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুন্দরবনের বেশী লবণ যুক্ত মাটিতে এরা হয়ে থাকে। তাই বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রার বৃদ্ধিতে এদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারন এরা বেশি লবণ যুক্ত মাটিতেও মানিয়ে নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে।
সুন্দরবনের কাছাকাছি লোকালয়ে কোন বাড়ীতে গেলে দেখতে পাওয়া যায় ত্বরার শুকনো গাছ কেটে উঠনে জমিয়ে রাখা আছে জ্বালানির জন্য। ত্বরার গাছ ছোট হওয়ার ফলে সহজে কাটা যায় এবং সুন্দরবনের গরীব মানুষজন তাই ত্বরাকে সহজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তবুও ত্বরা গাছের প্রাচুর্য এখনও দেখা যায়। ধ্বংস হওয়ার আতঙ্ক থাকলেও ত্বরা খোস মেজাজে সুন্দরবনে আছে, তাই আমাদেরকে দায়িত্ব নিয়ে একে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।