ম্যানগ্রোভ ও সুন্দরবনের কথা/৮

ম্যানগ্রোভ ও সুন্দরবনের কথা/৮

রথীন মণ্ডল
Posted on ৩১ অক্টোবর, ২০২১

বসন্ত এলেই ফুটতে থাকে ওরা

এ সুন্দরবনে গেঁও ফুলের মেলায়
মন ভরে যায় মৌমাছিদের খেলায়।

গেঁও গাছের উপস্থিতি সুন্দরবনের সর্বত্র। সুন্দরবনের লোকালয়ে, বনের মধ্যে এবং দূর মোহনায় এদের দেখা যায়। এমনকি কম, মাঝারি ও বেশী লবণযুক্ত মাটিতেও এরা জন্মাতে পারে। এদের পুরুষ ও স্ত্রী গাছ পৃথক পৃথক হয়। পুরুষ ফুল খুব ছোট হয়। এই ছোট ছোট ফুলগুলো একটা দণ্ডের চারধারে ঘন হয়ে সজ্জিত থাকে, যাকে ফুল মঞ্জুরি বলে। এই মঞ্জুরি দণ্ডটি নিচের দিকে ঝুলতে থাকে। বসন্তে ফুল ফোটে। ফুলের পাঁপড়ির গাঢ় হলদে রঙ চোখে পড়ার মতো। সারা গাছ ফুলে ভরে যায়, যেন ফুলের মেলা। আবার বসন্তে হালকা সবুজ কচি পাতা গজিয়ে ওঠে। সারা গাছ ভরে হলুদ-সবুজ রঙের বৈচিত্র্য দেখা যায়। তাতে পুরুষ গেঁও গাছ এক আলাদা শোভা পায়। তেমনি মৌমাছির দল ফুলে ফুলে খেলে বেড়ায় মধু সংগ্রহের জন্য। তুলনায়, স্ত্রী গাছে এত ঔজ্জ্বল্য দেখা যায় না। শীতকালে গেঁও গাছের পাতা ঝরে যায়।
পুরুষ ও স্ত্রী গেঁও গাছ মাঝারি উচ্চতার হয়, কিন্তু প্রচুর ডালপালা থাকে। ভিন্ন লিঙ্গের দুটি গাছ পাশাপাশি জন্মায় যাতে পরাগযোগের ব্যাঘাত না ঘটে। এই গাছের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এদের মূলের বিন্যাস দেখতে সর্পিলাকার। মাটির ঠিক ওপরে কাণ্ডের চারদিক থেকে মূলগুলো সর্পিলাকারে বেশ কিছুটা ছড়িয়ে পরে। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, লম্বা লম্বা অনেকগুলো সাপ গাছের দিকে মুখ করে লেজগুলো পিছনে এঁকেবেঁকে ছড়িয়ে দিয়েছে। এই মূলগুলো ভুমিক্ষয় রোধে বিশেষ ভুমিকা পালন করে। কারণ মুলগুলোতে জালের মতো এমন বিন্যাস তৈরি হয়, যাতে মাটি আটকে থাকে।
গেঁও গাছের আঠা দেখতে ঘন দুধের মতো। এর ওষধিগুণ আছে। সুন্দরবনে এই গাছের প্রচুর বীজ হয় এবং তা থেকে অসংখ্য চারাগাছ জন্মায়। তাই এই গাছের ছেদন যতই মারাত্মক হোক না কেন, এর আপাতত নিঃশেষ হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই গাছের কাণ্ড খুব একটা শক্ত হয় না, তাই জ্বালানীতে বেশি ব্যবহার হয়। এই গাছ সবরকম লবণের মাত্রা সহ্য করতে পারে। তাই বায়ুমণ্ডলের উষ্ণায়ণের বৃদ্ধিতে এদের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। দুই বাংলার সুন্দরবনে এদের অবস্থা ভাল। সম্ভবত ডায়মন্ড হারবারে গঙ্গার ওপারে গেঁওখালির নামকরণ একসময় গেঁও গাছের আধিক্য থেকেও হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 2 =