রাতেরবেলায় উজ্জ্বল আলো আর ডায়াবেটিসের মধ্যে যোগসূত্র

রাতেরবেলায় উজ্জ্বল আলো আর ডায়াবেটিসের মধ্যে যোগসূত্র

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১১ জুলাই, ২০২৪
ডায়াবেটিস-এবং-রাতেরবেলায়-উজ্জ্বল আলো

আমাদের শরীরের নিজস্ব একটি ঘড়ি আছে। যার উপর নির্ভর করে শারীরবৃত্তীয় সমস্ত কাজকর্ম। রাতে বাল্বের উজ্জ্বল আলো বা স্মার্টফোনের আলো শরীরের এই ঘড়ির ছন্দকে তালগোল পাকিয়ে দিতে পারে। সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে মধ্যরাতের পরে কৃত্রিম আলোয় থাকলে শরীরে দানা বাঁধতে পারে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগ। গবেষণাটি দ্য ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ-ইউরোপে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় ৪০ থেকে ৬৯ বছর বয়সী প্রায় ৮৫০০০ ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল। অংশগ্রহণকারীদের কব্জিতে একটি যন্ত্র পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল যার সাহায্যে এক সপ্তাহ ধরে তারা যে বিভিন্ন মাত্রার আলোর সংস্পর্শে এসেছে তা ট্র্যাক করা গেছে। ইউকে বায়োব্যাঙ্ক পরীক্ষার অংশ হিসাবে, দলটির স্বাস্থ্য দীর্ঘ নবছর যাবৎ ট্র্যাক করা হয়েছিল। যে সকল অংশগ্রহণকারী পরবর্তীতে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়েছিল দেখা গেছে অধ্যয়নের সময়কালে তারা সপ্তাহব্যাপী রাত ১২.৩০ থেকে সকাল ৬-টার মধ্যে আলোর সংস্পর্শে এসেছিল। যদিও এই ফলাফল কারণ এবং প্রভাব প্রমাণ করে না, তবে মাঝরাতে উজ্জ্বল আলো এবং একটি বিপাকীয় ব্যাধির ঝুঁকির মধ্যে একটি সম্পর্কের হদিশ দেয়। গবেষণা অনুসারে রাতে কৃত্রিম আলোয় থাকা – তা সে রিডিং ল্যাম্পের হলুদ আলো হোক বা স্মার্টফোন বা টিভির নীল আলো, সবক্ষেত্রেই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। কিন্তু বর্তমান গবেষণায় গবেষকরা ঘুমের ধরন এবং সময়কালের হিসাব করার সময় দেখেছেন এক্ষেত্রে আরও একটি প্রক্রিয়া কাজ করে। যদিও অন্যান্য সম্ভাব্য কারণ যেমন ব্যক্তির লিঙ্গ, ডায়াবেটিসের জন্য তাদের জেনেটিক ঝুঁকি, তাদের খাদ্যতালিকা, শারীরিক কার্যকলাপ, দিনের আলোতে থাকার সময়কাল, ধূমপান বা অ্যালকোহল ব্যবহার, ফলাফলের উপর কোন প্রভাব ফেলেনি। কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গবেষকরা জানিয়েছেন যে সাম্প্রতিক কিছু তথ্য প্রমাণ করে প্রাণী এবং মানুষের মধ্যে কৃত্রিম আলোর এক্সপোজার শরীরের ছন্দকে ব্যাহত করতে পারে, যার ফলে গ্লুকোজ সহনশীলতা হ্রাস পায়, ইনসুলিন নিঃসরণ পরিবর্তিত হয় এবং ওজন বৃদ্ধি হয়- এবং এই সবই টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মতো বিপাকীয় ব্যাধির ঝুঁকির সাথে যুক্ত৷ তবে এই অধ্যয়নের প্রধান সীমাবদ্ধতা হল যে গবেষকরা খাবারের সময় বিবেচনা করতে সক্ষম হননি, আর খাবারের সময় সার্কাডিয়ান রিদম এবং গ্লুকোজ সহনশীলতা উভয়ের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাছাড়াও, কিছু আর্থ-সামাজিক কারণ যেমন ব্যক্তির বাড়ির অবস্থা ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিবেচনা না করে আঞ্চলিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছিল, এবং শুধুমাত্র বয়স্ক ব্যক্তিদের বিবেচনা করা হয়েছিল। গবেষণায় জানা গেছে যে পৃথক পৃথক ব্যক্তি আলোর প্রতি ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। মেলাটোনিনের উত্পাদনকে দমন করার জন্য প্রয়োজনীয় আলোর তীব্রতা, যা আমাদের সার্কাডিয়ান রিদমকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, তা ৬ থেকে ৩৫০ লাক্সের মধ্যে হতে পারে। পূর্ববর্তী পরীক্ষা থেকে জানা গেছে যে যখন মেলাটোনিনের উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং শরীরের ছন্দ অনিয়মিত হয়, তখন অগ্ন্যাশয় থেকে কম ইনসুলিন নিঃসরণ হয়। ফলত ব্যক্তিরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে। গবেষকদের মতে এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 + eleven =