রাসায়নিক পদার্থে নষ্ট হচ্ছে ওজোন স্তর

রাসায়নিক পদার্থে নষ্ট হচ্ছে ওজোন স্তর

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৪ অক্টোবর, ২০২১

পৃথিবীর ওপর আকাশে যে স্ট্র্যাটোস্ফেরিক ওজোন স্তর রয়েছে মনুষ্যজীবনে তার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুর্যকিরণে যে আল্ট্রা-ভায়োলেট বিকিরণ হয় তার এক বড় অংশ শূষে নেয় এই ওজোন স্তর। দু’রকমের আল্ট্রা-ভায়োলেট রশ্মি রয়েছে। ইউভিএ আর ইউভিবি। ইউভিবি রশ্মি মানুষের গায়ে লাগলে চামড়ায় ক্যানসার হতে পারে। শষ্য নষ্ট হতে পারে। বিজ্ঞানীরা মাছের ওপর পরীক্ষা করে দেখেছেন। ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ মাছ স্কিন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে ইউভিবি রশ্মির জন্য। উদ্ভিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইউভিএ রশ্মির প্রভাবে।
এই দুই বিষাক্ত রশ্মিকে শোষণ করে যে ওজোন স্তর পৃথিবীর মানুষ, উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণীকে সুরক্ষিত করে আসছে সেই ওজোন স্তর এবার সংকটে! নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ওজোন স্তর। সৌজন্যে মানুষেরই সৃষ্ট নানারকমের রাসায়নিক পদার্থ!
বিজ্ঞানীদের গবেষণা জানিয়েছে, হ্যালোকার্বন এরকম একটি রাসায়নিক পদার্থ। হ্যালোকার্বনে রয়েছে ব্রোমিন নামের একটি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ। বাতাসে ব্রোমিনের ছড়িয়ে পড়ায় ক্রমশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে স্ট্র্যাটোস্ফেরিক ওজোন স্তর। মানুষেরই তৈরি মেথিল ব্রোমাইড, মেথিল ক্লোরোফর্ম, কার্বন টেট্রাক্লোরাইডের মত রাসায়নিক পদার্থও বাতাসে মিশছে আর তাতেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ওজোন স্তর। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ওজোন স্তরের ঘনত্ব কমে যাওয়ার ফলে আবহাওয়ারও পরিবর্তন হচ্ছে। ১৯৯৪-এ সম্মিলিত রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় ১৬ সেপ্টেম্বর দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক ওজোন দিন’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, উপস্থিত রাষ্ট্রপ্রধানরা ঠিক করেছিলেন ১৯৮৭-র মন্ট্রিয়লের সভায় যে শপথ নেওয়া হয়েছিল সেটা পালন করা হবে। কী সেই শপথ? ২০০০ সালের মধ্যে সিএফসি-র নির্গমন শূন্যে নিয়ে যেতে হবে। সিএফসি-র উৎপাদন কোন কোন শিল্প থেকে হয়? মূলত গাড়ি শিল্প, ফ্রিজ এবং শীতাতপ যন্ত্র (এয়ার কন্ডিশনার) শিল্প, এরোজল স্প্রে এবং ফোমের তৈরি নানারকমের জিনিস উৎপাদন থেকে। গবেষণা জানাচ্ছে পৃথিবীর উন্নততর দেশগুলিতে ১৯৮৭-র পর থেকে সিএফসি-র নির্গমন অনেকটা কম। কিন্তু তৃতীয় বিশ্ব এবং উন্নয়নশীল দেশ? তাদের পক্ষে সিএফসি নির্গমন কমানো সম্ভব হয়নি। আর তার প্রতিফলন পড়ছে ওজোন স্তরের ওপর।
বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ, ওজোন হোল খুব ছোট হয়ে গিয়েছে। ২০১৯-এ দেখেছেন তারা। বলছেন ১৯৮২-র পর এত ছোট আর কখনও হয়নি! তাদের মনে হচ্ছে, ওজোন হোল স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে আরও ৫০ বছর লেগে যাবে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 − four =