
কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের প্রিসিশন হেলথকেয়ার ইউনিভার্সিটি রিসার্চ ইনস্টিটিউট পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় জানা গেছে যে, নারী ও পুরুষদের মধ্যে বিভিন্ন রোগের তারতম্যের কারণ শুধুমাত্র জিন নয়, এর পিছনে আরো জটিল উপাদান কাজ করে।
দেখা গেছে, নারী ও পুরুষের মধ্যে বেশকিছু প্রোটিনের মাত্রা ভিন্ন হয়, কিন্তু এই পার্থক্যের জিনগত ভিত্তি খুবই সামান্য।
এই গবেষণাটি নেচার কমিউনিকেশন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা ইউকে বায়োব্যাঙ্ক এবং ফেনল্যান্ড স্টাডির তথ্য বিশ্লেষণ করে ৫৬,০০০ পুরুষ ও নারীর মাঝে ৬,০০০টি প্রোটিন ও শত শত রোগের মধ্যে সম্পর্ক অনুসন্ধান করেছেন ।তারা দেখতে পান, দুই-তৃতীয়াংশ প্রোটিনের মাত্রায় লিঙ্গভেদে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু যখন তারা জেনেটিক “সুইচ” বা নিয়ন্ত্রণকারী জিনগুলোর দিকে তাকান, তখন দেখা যায় মাত্র প্রায় ১০০টি প্রোটিনই লিঙ্গভেদে আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়।এই ফলাফল থেকে বোঝা যায়, প্রোটিন মাত্রায় লিঙ্গভেদে পার্থক্য থাকলেও, তা কেবল জিন ফ্যাক্টর দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। বরং, হরমোন, জীবনযাপন, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা, আর্থিক অবস্থা এবং স্বাস্থ্যসেবা সহ অন্যান্য সামাজিক ও পরিবেশগত বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গবেষণার প্রধান লেখক মাইন কপরুলু বলেন, এই প্রথমবারের মতো তাঁরা মানুষের জিন, প্রোটিন এবং স্বাস্থ্য নিয়ে এত বিস্তারিতভাবে গবেষণা করলেন। তাদের এই বৃহৎ গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, স্বাস্থ্যবিষয়ক সিদ্ধান্তে শুধুমাত্র জিনগত ভিন্নতা নয়, পরিবেশগত এবং সামাজিক দিকগুলোকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
এর পরিচালক ও সহ-লেখক অধ্যাপক ক্লডিয়া ল্যাঙ্গেনবার্গ বলেন, যেহেতু ওষুধ উন্নয়নের জন্য প্রোটিনের কার্যকারিতা ও মাত্রার উপর নির্ভর করা হয়, তাই পুরুষ ও নারীর মধ্যে প্রোটিন নিয়ন্ত্রণের পার্থক্য বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। তবে তাঁদের গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ জিনের ভিন্ন রূপ/প্রকার উভয় লিঙ্গে একইভাবে কাজ করে। এই গবেষণায় মানুষের লিঙ্গ (44A+XX বা 44A+ XY ক্রোমোসোম) অনুযায়ী তথ্য শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছিল। তবে গবেষকরা স্বীকার করেছেন, এটির সঙ্গে সর্বদা একজন ব্যক্তির লিঙ্গ পরিচয়ের মিল নাও থাকতে পারে।
এই গবেষণা ভবিষ্যতে লিঙ্গভিত্তিক চিকিৎসা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।