লুনাকে বাঁচাতে আন্দোলন জুলিয়ার

লুনাকে বাঁচাতে আন্দোলন জুলিয়ার

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১

ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যাফোর্ডের কাছে একটি এক হাজার বছরের পুরনো রেড-উড গাছ। আজ সে কিংবদন্তি হয়ে উঠেছে। ১৯৯৭-এ তার নাম দেওয়া হয়ছিল ‘লুনা’। গাছটির উচ্চতা ২০০ ফুট। পরিধি ৪৫ ফুট। ১৯৯৭-এ তার নামকরণের পরই লুনার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। একটি মার্কিন কাঠের সংস্থা প্যাসিফিক লাম্বার, স্ট্যাফোর্ডের কয়েক একর জমি লিজ নিয়ে নেয় যার মধ্যে পড়েছিল লুনাও। লুনা টুকরো টুকরো হওয়ার আগেই এক মার্কিন পরিবেশবিদ জুলিয়া বাটারফ্লাই হিল নামেন আন্দোলনে। মনে রাখার মত ছিল সেই প্রতিবাদ। মৌখিক প্রতিবাদে কাজ হয়নি, হতও না কারণ লুনা সহ অঞ্চলটিই লিজ নিয়েছিল প্যাসিফিক লাম্বার। তখন লুনা-র নিধন আটকাতে জুলিয়া চড়ে বসেন ওই গাছে! গাছের ১৮০ ফুট ওপরে একটি ৬ বাই ৮ ফুটের মাচা বানিয়ে ওখানেই জুলিয়া থাকতে শুরু করেন। পরবর্তী ৭৩৮ দিন, মানে প্রায় দু’বছরের জন্য ওই গাছ হয়েছিল জুলিয়ার স্থায়ী বাসস্থান! সঙ্গী ছিল সৌরশক্তি চালিত আলো, রেডিও এবং একটি টেলিফোন। বাকি প্রয়োজনীয় সামগ্রী, খাবার, সবই তাকে সরবরাহ করতেন জুলিয়ার সহযোদ্ধারা।
পেশায় আইনজীবী জুলিয়াকে পরবর্তী দু’বছর লুনার থেকে আলাদা করা যায়নি। ঝড়, বৃষ্টি, শৈত্যপ্রবাহ সামলানোর পাশাপাশি প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে কত যে ফোন গিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই! তবু গাছ থেকে নামেননি জুলিয়া। শেষপর্যন্ত জুলিয়ার লড়াইয়ের কাছে হার মানে প্যাসিফিক লাম্বার। লুনাকে বাদ রেখে ওই অঞ্চলের অন্যান্য গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। আর জুলিয়ার উদ্যোগে লুনার গুঁড়িটি লোহার পাত দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। গাছের একাধিক অংশের ভেঙে পড়া আটকাতে ইস্পাতের বিম বসানো হয়েছে। হাজার বছরের ঐতিহ্য নিয়ে লুনা বেঁচে আছে।
বিশ্বে সাড়া ফেলে দেওয়া আর একটি একইরককমের আন্দোলন উত্তরপ্রদেশের চিপকো আন্দোলন। সেখানেও বৃক্ষছেদন প্রতিরোধ হয়েছিল আর আন্দোলনের পুরোধায় ছিলেন মহিলারা।