শতাব্দীপ্রাচীন সমীকরণে অঙ্কের ভুল, পাল্টাবে রঙের ধারণা

শতাব্দীপ্রাচীন সমীকরণে অঙ্কের ভুল, পাল্টাবে রঙের ধারণা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার তুলনায় অঙ্কের পুরনো তত্ত্বগুলো ভুল প্রমাণ করতে বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হয়। গণিতের কিছু কিছু সমীকরণ প্রায় বেদবাক্যের মতো – শ্রেফ অকাট্য। কিন্তু তিন মাত্রার জ্যামিতিতে এমনই এক প্রতিষ্ঠিত সমীকরণ ভুল বলে দেখিয়ে দিলেন লস অ্যালামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির গবেষকরা। আমাদের চোখে নানান রঙ কীভাবে ধরা দেয়, বদলে যেতে পারে সেই ধারণাও।

আজ থেকে একশো বছরেরও আগে আরউইন শ্রোডিঞ্জার নোবেল পেয়েছিলেন। বিষয় ছিল – কীভাবে এক রঙ থেকে অন্য রঙকে পৃথক করতে পারে আমাদের চোখ, সেটাকে ব্যাখ্যা করতে একটা তিন মাত্রার গাণিতিক সমীকরণ (থ্রি ডাইমেনশানাল ম্যাথামেটিকাল স্পেস)। টেলিভিশন, প্রিন্ট মিডিয়া, কম্পিউটার গ্রাফিক্স সহ নানান ক্ষেত্রে এই তত্ত্বের বহুল প্রয়োগ হয়েছে গত একশো বছর ধরে।

রঙের দুনিয়ার কাঠামোয় একটা আমূল পরিবর্তন দরকার, ব্যখ্যা দিচ্ছেন রোক্সানা বুসাক। এনার পড়াশুনো শুরু হয়েছিল গণিতশাস্ত্রে, পরে কম্পিউটার বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করছেন লস অ্যালামস ন্যাশানাল ল্যাবরেটরিতে। বুসাকের মতে, শ্রোডিঞ্জারের শতক পুরনো মৌলিক তত্ত্বটাকে ভুল প্রমাণ করার লক্ষ্য নিয়ে গবেষণা শুরু হয়নি যদিও।

আসল পরিকল্পনা ছিল রঙের ধারণা পোক্ত করা। সেই জন্যে গাণিতিক একটা অ্যালগরিদম তৈরি করাই উদ্দেশ্য ছিল।  কিন্তু বক্রতলের উপর সরলরেখা ফিট করতে যখন রিম্যানের জ্যামিতি প্রয়োগ করা হয়, গলদ ধরা পড়ে তখনই। রিম্যান সমীকরণ আর কাজ করেনি।

সাধারণত ইউক্লিডের জ্যামিতি ব্যবহার করেই নানান বর্ণের ধারণা পাওয়া যেত। সূক্ষ্ম মডেল তৈরিতে কেউ কেউ রিম্যান জ্যামিতিও কাজে লাগিয়ে থাকেন। প্রত্যেক ধাঁচা থেকে লাল, সবুজ আর নীল রঙ শনাক্ত করা সম্ভব। কারণ এই তিনটে রঙই আমাদের চোখে সবচেয়ে সহজে ধরা পড়ে। আবার, তিন মৌলিক বর্ণের সংমিশ্রণেই বাকি সমস্ত রঙ সৃষ্টি হয়, যা আমরা প্রতিদিন নানান জায়গায় দেখে থাকি।

মনোবিজ্ঞান, জীববিদ্যা আর অঙ্কের সিদ্ধান্তগুলো কাজে লাগিয়ে বুসাকের গবেষক দল দেখিয়েছেন কেন রিম্যান জ্যামিতি বিভিন্ন রঙের ফারাক ঠিকঠাক দর্শাতে পারে না। দুটো আলাদা শেডের রঙের ভেতর ততটাও অমিল থাকে না যতটা আমাদের চোখে ধরা পড়ে।

বুসাক জানিয়েছেন, আমরা এখনও রঙের জগতের জন্য সঠিক জ্যামিতিক গঠন খুঁজে পাইনি। গবেষণাপত্রটা বেরিয়েছে ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের প্রবন্ধমালায়।