সমুদ্র তলদেশের নীচে বিজ্ঞানীদের নতুন বাস্তুতন্ত্র আবিষ্কার

সমুদ্র তলদেশের নীচে বিজ্ঞানীদের নতুন বাস্তুতন্ত্র আবিষ্কার

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ১৪ আগষ্ট, ২০২৩

বিজ্ঞানীরা আমাদের গ্রহের নানা স্থানে এখনও জীবনের নতুন সন্ধান পাচ্ছেন। অতি সম্প্রতি, শ্মিট ওশান ইনস্টিটিউটের অভিযানে একটা জাহাজে অ্যাকোয়ানাটরা গভীর, অন্ধকার প্রশান্ত মহাসাগরে আগ্নেয়গিরির ভূত্বকের স্ল্যাবগুলো ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য একটা ডুবো রোবট ব্যবহার করেছিল৷ এই অঞ্চলের সমুদ্রতলের নীচে, এই আন্তর্জাতিক গবেষকের দল সমুদ্রের তলদেশের ফাটলের সূক্ষ অংশে গরম তরল যেখান থেকে সরু ধারায় বেরিয়ে করেছে, সেখানে নানা জীবের অস্তিত্ব পেয়েছেন, এই বাস্তুতন্ত্রের অস্তিত্ব পূর্বে কারোর জানা ছিল না।
এই ইনস্টিটিউটের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জ্যোতিকা বিরমানি বলেছেন, অনেক আগে থেকেই মাটির ভূগর্ভস্থ গহ্বরে বসবাসকারী প্রাণী বা সমুদ্রের নীচে বালি ও কাদায় বসবাসকারী প্রাণীরা বাস করে তা জানা ছিল। কিন্তু প্রথমবারের মতো, বিজ্ঞানীরা হাইড্রোথার্মাল ভেন্টের নীচে প্রাণীদের সন্ধান পেয়েছেন। হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট বলতে সমুদ্রের তলদেশের ফাটল বা রন্ধ্র বোঝায় যেখান দিয়ে ভূগর্ভস্থ গরম জল বেরিয়ে আসে। এটা সাধারণত সক্রিয় আগ্নেয়গিরির কাছাকাছি অঞ্চলে দেখা যায়, যেখানে টেকটনিক প্লেট সমুদ্রের মাঝ বরাবর বা তলদেশে একটু সরে যায়।
সত্তরের দশকে বিজ্ঞানীরা শুধুমাত্র হাইড্রোথার্মাল ভেন্টগুলো আবিষ্কার করেছিলেন, যা গভীর সমুদ্রে গরম, খনিজ সমৃদ্ধ তরল প্রবাহিত করে। এই গভীরতা অন্ধকার সত্ত্বেও, এর আশেপাশে জীবন গড়ে উঠেছিল। গত ৪৬ বছরের গবেষণায়, কেউ কখনও সমুদ্রের উষ্ণ প্রস্রবণের তলদেশে জীবনের খোঁজ করার কথা ভাবেননি৷
এই অভিযানে দেখা গেছে কৃমি, শামুক এবং কেমোসিন্থেটিক ব্যাকটেরিয়ার একটা ইকোসিস্টেম তলদেশের ভেন্টে দেখা গেছে। এই প্রাণীরা শক্তির জন্য সূর্যের আলোর উপর নির্ভর করে না তাদের শক্তির উৎস হল ভূগর্ভস্থ খনিজ। ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তুবিদ মনিকা ব্রাইট বলেছেন, ভেন্টের আবাসস্থলে দু ধরনের প্রাণী বিদ্যমান। উপরিভাগের প্রাণীরা সমুদ্রের জলে অক্সিজেনের ওপর নির্ভর করে এবং নীচের প্রাণীরা নীচের থেকে নিঃসৃত তরলের ওপর নির্ভরশীল।
বিজ্ঞানীরা সবচেয়ে অবাক হয়েছেন টিউবওয়ার্ম দেখে, এই প্রাণীরা আগ্নেয়গিরির তরলগুলির মাধ্যমে সমুদ্রতলের নীচে ভ্রমণ করে নিজেদের নতুন কলোনি গঠন করে বলে মনে হচ্ছে। তাই কিছু ছোটো টিউবওয়ার্মকে গভীর আগ্নেয়গিরির ফাটলের চারপাশে জড়ো হতে দেখা যায়। বেশিরভাগই সমুদ্র তলদেশের নীচে পূর্ণাঙ্গ হয়। এ নিয়ে তারা একটি গবেষণা করেছেন, যা তারা শীঘ্র প্রকাশ করবেন। বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার করা এই সম্পূর্ণ নতুন ইকোসিস্টেম থেকে বোঝা যায় আমাদের মহাসাগর সম্পর্কে এখনও আমরা ততটা জানিনা, কিন্তু এই সব ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 4 =