সোনালী ঝিনুকের বিচিত্র কাণ্ড

সোনালী ঝিনুকের বিচিত্র কাণ্ড

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১২ ডিসেম্বর, ২০২১

সোনালী রঙের একজাতীয় ঝিনুক। বিজ্ঞানসম্মত নাম লিমনোপেরনা ফরচুনেই। আদি নিবাস চীনের ইয়াংঝে নদীতে। জলজ বাস্তুতন্ত্রের ধারাকে বদলে দিতে পারে কয়েক বছরেই। লাতিন আমেরিকার মূলত দুটি দেশে এই ঝিনুকশ্রেণি অদ্ভুত কাণ্ড ঘটাচ্ছে প্রায় দুদশকের বেশি সময় ধরে।

মারিয়া ক্রিস্টিনা ডেরহার মনসুর। বর্তমানে ৭৬ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ ভদ্রমহিলা সোনালী ঝিনুকের বিশেষজ্ঞ জীববিজ্ঞানী। লাতিন আমেরিকায় ব্রাজিলের দক্ষিনাংশে পোর্তো আলগ্রে নামের শহরের অদূরে গুয়াইবা হ্রদ। ১৯৯০ এ একদল ছাত্র নিয়ে মনসুর গুয়াইবা হ্রদের তীরবর্তী অঞ্চলে আসেন মূলত স্থানীয় জীব জগত স্টাডি করার উদ্দেশ্যে। সেসময় হ্রদও তীরবর্তী অংশ বিশেষ রকমের জলজ ঘাস দিয়ে প্রায় আবৃত ছিল। এবং হ্রদের নীচের মাটি ছিল স্থানীয় ঝিনুক জাতীয় প্রাণীর খোলসে ভর্তি।

কাট টু ৩০ বছর পরে।
গুয়াইবা হ্রদ। তীরবর্তী বেলাভূমি। গ্রীষ্মের বিকেল। স্থানীয় জনসাধারণ তীরে বসে সূর্যাস্তের আমোদ নিচ্ছেন। আর মনসুর অবসর জীবনের সুখবিলাস ছেড়ে গুয়াইবার কাদামাখা মাটিতে পা টেনে টেনে ভারি জাল দিয়ে টেনে তুলছেন ঝিনুক। তিরিশ বছর আগের মনসুরের চেনা বাস্তুতন্ত্র বদলে গেছে বিলকুল। মাত্র কয়েক মিনিটেই এক ব্যাগ স্থানীয় ঝিনুক কুড়ানো যেত তখন। আর এখন স্থানীয় ঝিনুক মাত্র খান ছয়েক খুঁজে পেতেই গোটা সকাল পরিশ্রম করতে হবে মনসুরকে। ৩০ বছর আগের স্থানীয় ঝিনুকের স্থান দখল করেছে সোনালী ঝিনুক। শুধু স্থানীয় ঝিনুক নয়, সোনালী ঝিনুক বদলে ফেলেছে গোটা বাস্তুতন্ত্রই। জলজ ঘাসগুলিকেও প্রায় গিলে খেয়েছে সোনালী ঝিনুকের দল। কীভাবে হলো এমন?

মনসুর গুয়াইবার তীরবর্তী অঞ্চলে ১৯৯৮ সালে প্রথম দেখেন সোনালী ঝিনুক। সেসময়েই মনসুরের সহকর্মীরা জানান সোনালী ঝিনুক ইতিমধ্যেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে আর্জেন্টিনায়। মনসুর খেয়াল করেন মাত্র দুমাসের মধ্যেই সোনালী ঝিনুক ছেয়ে যাচ্ছে হ্রদজুড়ে। অতিদ্রুত প্রতি বর্গমিটারে প্রায় ২০ হাজার ঝিনুক ছড়িয়ে পড়ে। এরা জলজ ঘাসের শিকড় নষ্ট করে ফেলে দ্রুত। অন্য সমস্ত পুরাতন ঝিনুক ইত্যাদি জীবকে প্রায় ঘিরে ফেলে দমবন্ধ করে দেয়। ফলে পুরোনো জীবগুলি মরে পচে গোটা তীর জুড়ে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পড়ে থাকে মৃত ঝিনুকের অবশ খোলা গুলি।

বর্তমানে ব্রাজিলে প্রথম তিনটি দ্রতগতিতে হানা দেওয়া জলচর জীবশ্রেণির একটি হলো সোনালী ঝিনুক। এরা বিভিন্ন জলাশয়ে প্রতি বছরে ২৪০ কিলোমিটার হারে ছড়িয়ে পড়ে। ব্রাজিল ছাড়াও আর্জেন্টিনার লা প্লাটা নদীতীরে এরা প্রতি বর্গমিটারে প্রায় ৮৫০০০ হারে ছড়িয়ে পড়েছে সোনালী ঝিনুক।