স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে সবসময় পুরুষরা আকারে বড়ো হয় না

স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে সবসময় পুরুষরা আকারে বড়ো হয় না

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৪ মার্চ, ২০২৪

একটি প্রজাতির বেশিরভাগ পুরুষ সদস্যরা শারীরিকভাবে স্ত্রীদের চেয়ে আকারে বড়ো এই ধারণাটি সম্ভবত চার্লস ডারউইনের ১৮৭১ সালের বই দ্য ডিসেন্ট অফ ম্যান থেকে উদ্ভূত হয়েছে। যদিও ধারণাটি গোরিলা, মোষ বা হাতির মতো কিছু প্রজাতির জন্য সত্য, তবে এটি চরম সত্য এবং সব প্রাজাতির ক্ষেত্রে এই ধারণাই বহাল থাকবে তা নয়। নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ৪০০টিরও বেশি স্তন্যপায়ী প্রজাতির পুরুষরা মহিলাদের চেয়ে আকারে বড়ো নয়। বিজ্ঞানের পরিভাষায় মনোমর্ফিজম অর্থাৎ উভয় লিঙ্গ প্রায় একই আকারের এই ধারণাটি খুবই সাধারণ এবং কিছু ক্ষেত্রে স্ত্রী প্রজাতিরা বড়োও হতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে প্রায় এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বিদ্যমান এই ধারণার মাধ্যমে বিজ্ঞানভিত্তিক লেখালেখিতে পুরুষদের উপর পক্ষপাতীত্ব প্রতিফলিত করে এবং সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে জীববিজ্ঞানীদের বোধগম্যতার সীমাবদ্ধতার দিকেও ইঙ্গিত করে। জীববিজ্ঞানী কাইয়া টমবাকের মতে এটি নিছকই একটি ধারণা যা আমরা এতদিন ধরে বয়ে নিয়ে চলেছি যার কোনো শক্তিশালী প্রমাণ নেই। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্য করেছেন যে একই প্রজাতির পুরুষ এবং স্ত্রীদের মধ্যে আকারে ভিন্নতা থাকতে পারে, এটিকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলে সেক্সুয়াল সাইজ ডাইমর্ফিজম বা লিঙ্গের ভিত্তিতে আকারে ভিন্নতা। এই পার্থক্যগুলো কেন হয় তা বোঝার জন্য, জীববিজ্ঞানীরা প্রায়শই বড়ো আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের নিয়ে অধ্যয়ন করেছেন যেমন সিংহ বা গোরিলা — যাদের পুরুষেরা আকারে বড়ো হয়ে থাকে।
টমবাক এবং তার সহকর্মীরা ৪২৯টি স্তন্যপায়ী প্রজাতির পুরুষ এবং স্ত্রীদের ওজনের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। গড়ে ৪৫%-এর ক্ষেত্রে পুরুষদের ওজন বেশি ছিল, ১৬%-এর ক্ষেত্রে স্ত্রীরা বেশি ভারী ছিল এবং ৩৯% প্রজাতির মধ্যে কোনও পার্থক্য ছিল না। প্রাণীর দৈর্ঘ্যের ক্ষেত্রেও অনুরূপ প্রবণতা খুঁজে পাওয়া গেছে। মাংসাশী প্রাণী, প্রাইমেট এবং আনগুলেট বা খুরওয়ালা প্রাণীদের ক্ষেত্রে পুরুষেরা ভারী হয়ে থাকে। কিন্তু বাদুড়ের ক্ষেত্রে স্ত্রী প্রজাতির ওজন বেশি এবং ইঁদুর জাতীয় প্রাণীদের ক্ষেত্রে পুরুষ ও স্ত্রীদের ওজন প্রায় একই রকম। গবেষণায় সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রজাতির মাত্র ৫% অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাই গবেষণার সাথে সংখ্যাগুলো আরও পরিবর্তিত হতে পারে, কিন্তু যেহেতু গবেষকরা বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণীর বিবর্তনীয় শাখাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে, তাই তারা নিশ্চিত যে তারা সঠিক সামগ্রিক চিত্রটি পেয়েছে।
পূর্ববর্তী গবেষণায় যদিও দেখা গেছে যে মহিলাদের বড়ো আকার বা ওজন বেশ সাধারণ কিন্তু, স্টকহোম ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী ম্যালিন আহ-কিং বলেন, গবেষণাটি পুরুষকেন্দ্রিক, এবং নারীদের সমতুল্য বিবর্তনকে প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়েছে। তার মতে এমন কিছু বিষয় আছে যা মানুষ কেবলমাত্র নির্দ্বিধায় অনুমান করে কারণ তারা এই বিষয় নিয়ে ভাবেনি। ফলত প্রচলিত অনুমান মেনে না নিয়ে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নতুন প্রশ্নের উদ্ভাবন প্রয়োজন যেমন কেন কিছু প্রজাতিতে স্ত্রীরা আকারে বড়ো হয় বা কেন কিছু প্রজাতির পুরুষ বা স্ত্রীদের মধ্যে আকারে কোনো তারতম্য থাকে না। তবেই বিশ্ব প্রাকৃতিতে কী ঘটছে তার পথ উন্মুক্ত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 + 16 =