হাঁপানি – বাদ নেই অলিম্পিক এথলিটরাও

হাঁপানি – বাদ নেই অলিম্পিক এথলিটরাও

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ জুলাই, ২০২৪
অলিম্পিক

অক্লান্ত ব্যায়াম ট্রিগার করতে পারে হাঁপানি!

হাতে গোনা মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরই শুরু হয়ে যাবে এক সুবিশাল ক্রীড়াযজ্ঞ। এবছর প্যারিসে আয়োজিত হতে চলেছে ৩৩ তম অলিম্পিক। বিগত সময়ে প্রতি চার বছর অন্তর আয়োজিত হলেও, ১৯৯৪ সালের পর থেকে শীত-গ্রীষ্ম মিলিয়ে এখন প্রতি দু বছর অন্তর অলিম্পিক হয়। খেলোয়াড়রা, শরীরের সর্বশেষ রক্তবিন্দু দিয়ে – দেশে একটা পদক আনার স্বপ্ন দেখেন। বছর ধরে চলে তারই নিরলস প্রচেষ্টা। কিন্তু এক গবেষণায় উঠে এসেছে, চাঞ্চল্যকর তথ্য।
মাত্রারিক্ত শরীরচর্চা ট্রিগার করতে পারে হাঁপানি। হ্যাঁ, এমনই তথ্য উঠে এসেছে অলিম্পিকের আগেই। খেলোয়াড়রা নিজেদের সবটুকু উজাড় করে খেলেন। ফলত শরীরে শুরু হয়, ব্যাথা। শুধু তাই নয় খেলতে খেলতে অ্যাথলিটরা বিভিন্ন ধরনের আঘাতেরও সম্মুখীন হয়। তার থেকেও থাকে সংক্রমণের আশঙ্কা। তবে এসবের চেয়েও সবথেকে বেশি যা চোখে পড়ছে তা হলো – অ্যাজমা বা হাঁপানি।
কেন এমনটা হয়? অক্লান্ত ব্যায়ামের সময় ফুসফুসের মধ্যে অতিরিক্ত বায়ুপ্রবাহ, এর অন্যতম কারণ হতে পারে বলে, বিজ্ঞানীদের ধারণা। তবে নির্দিষ্ট কারণ, সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার নয়। তাছাড়া, ২০২৪-এর প্যারিস গেমসে ১৪৫০০ বা তার বেশি ক্রীড়াবিদ এবং তাদের কর্মীরা অলিম্পিক ভিলেজে একসাথে থাকবেন। ধোঁয়া, দূষণ, ধুলো বা ভ্যাপসা জায়গায় গেলে হাঁপানির সমস্যা বেড়ে যায়। সেখানে বায়ুদূষণ এর মধ্যে দিয়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পরার আশঙ্কা অস্বীকার করা যায় না। শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতার সাথে সম্পর্ক আছে এই হাঁপানির।
শীতকালে হাঁপানির প্রকোপ বাড়লেও, গরমকালেও এর লক্ষণ দেখা যায়। সমীক্ষা বলছে, ১৯৯৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী ক্রীড়াবিদদের ২০%-এর উপর হাঁপানিতে ভুগেছেন; এবং শীতকালীন অলিম্পিকের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি ছিল আরও বেশী। ২০২৩ সালের এরকম আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে অলিম্পিক ক্রীড়াবিদদের ১৫ থেকে ৩০%-এর মধ্যে হাঁপানি রয়েছে এবং নির্দিষ্ট কিছু খেলাধুলার ক্ষেত্রে সংখ্যাটি ৫০%-এর বেশি।

বিশেষত সাঁতারুরা এই রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। সাঁতারের সময় তারা দ্রুত এবং বারবার শ্বাস নেয়, ফলত ক্লোরিনযুক্ত জলকণা তাদের নাক দিয়ে ঢুকে যায়। ফুসফুসে জ্বালার সৃষ্টি করে। যদি চিকিত্সা না হয়, ব্রঙ্কোকনস্ট্রিকশন, ফুসফুসে ক্ষত তৈরি করতে পারে। অন্যদিকে, শ্বাসনালী সংকুচিত হওয়া, তা থেকে কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসনালীর প্রদাহ এমনকি শ্বাসনালী বন্ধও হয়ে যেতে পারে। স্থায়ী কোনো ক্ষতি খেলাধুলায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নিয়মের ক্ষুরধারে থাকেন এদের অনেকেই। কিন্তু চিকিৎসায় দেখা দিচ্ছে চ্যালেঞ্জ। শ্বাসযন্ত্রের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত অনেক ওষুধই অলিম্পিক অ্যান্টি-ডোপিং নিয়মের অধীনে নিষিদ্ধ। এখানে উল্লেখ্য, মার্কিন সাঁতারু অ্যামি ভ্যান ডাইকেন এই রোগ নিয়েও ছটি স্বর্ণপদক জিতেছেন।

শুধু খেলোয়াড় নয়, আজ এই সমস্যা প্রায় ঘরে ঘরে। বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষে এই রোগে আক্রান্ত। প্রতিদিন হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন, হাঁপানিতে ভুগে। স্থান, কাল, পাত্র নির্বিশেষে দীর্ঘকাল ফুসফুসের এই রোগে ভোগেন বহু মানুষ। তবে অলিম্পিয়ান নন, কিছুটা দৌড়েই আপনারও মনে যদি হয় হাঁপিয়ে যাচ্ছেন, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তবে বুদ্ধিমানের কাজ হবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 3 =