আবিষ্কার দৈত্যাকৃতি ব্যাকটিরিয়া

আবিষ্কার দৈত্যাকৃতি ব্যাকটিরিয়া

গবেষণাগারে টিউবের মধ্যে রাখা হয়েছে ওটিকে। লম্বা লম্বা সেমুইয়ের মত দেখতে লাগছে। তার গায়ে জড়িয়ে রয়েছে পাতা, আবর্জনা। খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে সেমুইটিকে! এতেই বিস্মিত হয়ে গিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এটি একটি ব্যাকটিরিয়া। তাকে মাইক্রোস্কোপ ছাড়া দেখা দুঃসাধ্য ব্যাপার। সেখানে সেমুইয়ের মত লম্বা এই ব্যাকটিরিয়াকে খালি চোখে দেখছেন বিজ্ঞানীরা।
জা-মেরি ভল্যান্ড। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এনার্জি, জেনোম ইনস্টিটিউটের একজন প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানী। ব্যাকটিরিয়াটিকে দেখে তার মন্তব্য, “সাধারণ ব্যাকটিরিয়ার থেকে এটি অন্তত ৫ হাজার গুণ বড়! এটিকে দেখলে মনে হয় একটি সাধারণ উচ্চতার মানুষ লড়াই করছে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতার কোনও মানুষের বিরুদ্ধে!” আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা জার্নাল সায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে এই দৈত্যাকৃতি ব্যাকটিরিয়ার কথা। ভল্যান্ড আরও জানিয়েছেন, অধিকাংশ ব্যাকটিরিয়ার ক্ষেত্রে তার ডিএনএ তার সাইটোপ্লাসমের সেলগুলোর মধ্যে স্বাধীনভাবে বিচরণ করে। কিন্তু ভল্যান্ডের পর্যবেক্ষণে, এই ব্যাকটিরিয়ার ক্ষেত্রে তার ডিএনএ অনেক সংগঠিত। ভল্যান্ডের কাছে সবচেয়ে আশ্চর্য লেগেছে যে, বিশাল এই ব্যাকটিরিয়ার জিনোমগুলি যে সেলগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে সেটা আসলে একটা কাঠামো এবং সেলগুলোর ফাঁকে ফাঁকে পর্দাও রয়েছে! ব্যাকটিরিয়াটি আবিষ্কার করেছেন অলিভার গ্রস। আন্তিলেস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন বায়োলজির অধ্যাপক। দক্ষিণ ক্যারিবিয়ান সমুদ্রের ওপর গুয়াদেলপ নামের এক দ্বীপপুঞ্জে ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে পাওয়া গিয়েছে এই বিরল ব্যাকটিরিয়াকে। সালফার-সমৃদ্ধ ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে গ্রস খুঁজছিলেন সালফার অক্সিডাইজিং উপাদান। সেখানেই তিনি দেখতে পান দৈত্যাকৃতি এই ব্যাকটিরিয়াকে। বলেছেন, “প্রথমে দেখে অবাকই হয়েছিলাম। মনে হয়েছিল একটা পাতা। ভাবতেই পারিনি এটা আসলে একটা ব্যাকটিরিয়া। ভেবেছিলাম এটা সালফার-সমৃদ্ধ প্রোক্যারিয়ট।”
২০০৯-এ আবিষ্কৃত এই অতিকায় বস্তুটি যে আসলে একটি ব্যাকটিরিয়া সেটা বার করা খুব সহজ হয়নি বিজ্ঞানীদের কাছে। আন্তিলেস বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও একজন মলিকিউলার বায়োলজির অধ্যাপক সিলভিনা গঞ্জালেজ রিজ্জো। তিনি গবেষণাগারে এই ব্যাকটিরিয়াকে দেখে ভেবেছিলেন এটি ইউরোক্যারিয়ট। বলেছেন, “একটা এত বড় সিঙ্গল সেলের ব্যাকটিরিয়া বলে একে প্রথমে ভাবতেই পারিনি।” শেষপর্যন্ত এই ব্যাকটিরিয়ার জিনোম আবিষ্কৃত হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে এটা থিওমার্গারিতা জিনোমের অন্তর্ভূক্ত। অত্যাধুনিক মাইক্রোস্কোপ, নানারকমভাবে এক্স-রে করার পর ভল্যান্ড মাপতে পেরেছেন এই ব্যাকটিরিয়াকে। যার দৈর্ঘ্য ৯.৬৬ মিলিমিটার! রিজ্জোও বলেছেন, “এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে ব্যাকটিরিয়ার চরিত্র, জিন, মর্ফোটাইপ-সব নিয়ে গবেষণা করতে আরও সুবিধে করে দেবে বিজ্ঞানীদের।” একইসঙ্গে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে, ম্যানগ্রোভ যেভাবে বিশ্বজুড়ে সমুদ্র ও নদীর উপকূলবর্তী অঞ্চলের ইকো-সিস্টেমকে ধরে রাখে সেটাও বুঝতে সুবিধে হবে আগামীদিনে। কারণ দৈত্যাকৃতি এই ব্যাকটিরিয়ার অস্তিত্ব ম্যানগ্রোভের জঙ্গল থেকেই পাওয়া গিয়েছে আর বিজ্ঞানীরা বুঝেছেন এই ব্যাকটিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ম্যানগ্রোভের বড় হওয়া, বেঁচে থাকার পেছনে।