আয়ু যার মাত্র সাতদিনের !

আয়ু যার মাত্র সাতদিনের !

পৃথিবীর বুকে এমন অনেক আশ্চর্য প্রাণী বা উদ্ভিদ রয়েছে যাদের বিষয়ে জানলে মনে হবে এ-ও সম্ভব! পৃথিবীতে এমন পতঙ্গও রয়েছে, যা পৃথিবীর আলো দেখার পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যেই মারা যায়।এই পতঙ্গের নাম অ্যাটাকাস অ্যাটলাস। এটি এক বিশেষ ধরনের প্রজাপতি। বিশ্বের বৃহত্তম প্রজাপতিও বটে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জঙ্গল, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং বোর্নিও দ্বীপপুঞ্জে এই বিশেষ প্রজাপতির দেখা মেলে। এই প্রজাপতির বিশাল আকারের জন্যই গ্রিক পুরাণ মেনে এর নাম দেওয়া হয়েছে অ্যাটলাস।চিনের বেশ কিছু জায়গায় এই বিশেষ প্রজাপতি স্নেকহেড প্রজাপতি নামেও পরিচিত। এই প্রজাপতির ডানার প্রান্তদেশ অবিকল সাপের মাথার মতো দেখতে। আর সেই কারণেই চিনে এর নাম দেওয়া হয়েছে স্নেকহেড। পাখিদের শিকার হওয়া থেকে বাঁচতে বিবর্তনের হাত ধরে স্নেকহেডের ডানা এই বিশেষ রূপ নিয়েছে বলে জীববিজ্ঞানীদের মত।লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের আধিকারিক কেটি পাভিড জানান, বিপদে পড়লে এই প্রজাপতি মাটিতে নেমে আসে এবং সাপের মাথা ও ঘাড়ের নড়াচড়া নকল করে শিকারি পাখিদের ভয় দেখানোর জন্য ধীরে ধীরে ডানা ঝাপটায়।
কেন জন্মের ঠিক পাঁচ থেকে সাত দিনের মাথায় মারা যায় এই প্রজাপতি? কারণ এই প্রজাপতির কোনও মুখ নেই। আর সেই কারণে না খেতে পেয়ে জন্মের কিছু দিনের মধ্যে অ্যাটাকাস অ্যাটলাস মারা যায়। শুধু মাত্র লার্ভা অবস্থায় থাকাকালীনই এই প্রজাপতি খাদ্যগ্রহণ করতে পারে। এর পর লার্ভা পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতিতে পরিণত হলে এর মুখগহ্বর লোপ পায়। জন্মের পর এই প্রজাপতির একমাত্র কাজ হয় জনন প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া। তবে যে হেতু জন্মের পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে অ্যাটাকাস অ্যাটলাস মারা যায়, তাই পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতিতে পরিণত হওয়ার পর পরই এই প্রজাপতি যৌনসঙ্গম শুরু করে। ডানার তুলনায় এদের শরীর আকারে বেশ ছোট। এই বিশেষ প্রজাপতির ডানার বিস্তৃতি প্রায় ২৪ সেন্টিমিটার। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে বাস করা সম্রাট প্রজাপতি (থাইসানিয়া এগ্রিপিনা)-র ডানার থেকেও অ্যাটাকাস অ্যাটলাসের ডানা আকারে বড়। অ্যাটাকাস অ্যাটলাসের ডানার উপরের অংশটি মূলত লালচে বাদামি রঙের। তবে এই ডানায় একাধিক কালো, সাদা, গোলাপী এবং বেগুনি রঙের রেখা দেখতে পাওয়া যায়। তবে ডানার নীচের অংশ ফ্যাকাশে।
পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতিতে পরিণত হওয়ার পর অ্যাটাকাস অ্যাটলাস আর খেতে পারে না। লার্ভা অবস্থায় তারা অতিরিক্ত চর্বি সঞ্চয় করে রাখে।
প্রজাপতিতে পরিণত হওয়ার পর অ্যাটাকাস অ্যাটলাস যতটা সম্ভব কম ওড়ে। ওড়ার জন্যও যে শক্তির প্রয়োজন, সেই শক্তি তারা সঞ্চয় করে রাখে।
এমনিতেই অ্যাটাকাস অ্যাটলাসের আয়ু খুব কম। তার উপর শরীরের তুলনায় ডানার আকার বড় হওয়ায় এরা খুব অল্প উড়েই হাঁপিয়ে যায়। তাই এরা দিনের বেলায় বিশ্রাম নেয় এবং শুধুমাত্র রাতের বেলায় প্রয়োজন পড়লে উড়ে যায়। অ্যাটাকাস অ্যাটলাস এক বিশেষ ধরনের রেশম তৈরি করে যা গাঢ় রঙের এবং উলের মতো হয়। পাশাপাশি এই রেশম বেশ টেকসই হওয়ায় বেশ কিছু জায়গায় এই রেশমের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে এই রেশম আকারে ছোট হওয়ায় বাণিজ্যিক ভাবে এর ব্যবহার প্রায় হয় না বললেই চলে। অ্যাটাকাস অ্যাটলাস হেটেরোসেরা প্রজাতির পতঙ্গ। অ্যাটাকাস অ্যাটলাসকে কখনও কখনও মথ বলে ভুল করা হয়। মথেরা প্রধানত নিজেদের লার্ভায় খাবার সঞ্চয় করে রাখে।অ্যাটাকাস লার্ভা মূলত সাইট্রাস, দারুচিনি, পেয়ারা এবং চিরহরিৎ পাতা খেয়ে বেঁচে থাকে।