ইন্টারনেটের খোলনলচে বদলে দিতে আসছে নতুন প্রযুক্তি

ইন্টারনেটের খোলনলচে বদলে দিতে আসছে নতুন প্রযুক্তি

১৮৩০ সালে রাশিয়ায় আবিষ্কৃত পেরোভাস্কিট নামক খনিজই ভবিষ্যতের অতি-দ্রুত যোগাযোগ ও কম্পিউটার ব্যবস্থার চাবিকাঠি।

এক বিশেষ ধরণের পেরোভাস্কিট উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন সদ্য। জৈব ও অজৈব যৌগ মিশ্রিত নতুন এই খনিজের গঠন যদিও প্রকৃত পেরভাস্কিটের মতোই। খনিজটিকে সিলিকন আস্তরণের উপরে রাখলে, একপ্রকার অধিক শক্তিশালী উপাদান তৈরি করা সম্ভব যা ভবিষ্যতের অন্তর্জাল ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বৈদ্যুতিক মাধ্যম ব্যবহার না করে সরাসরি আলোর সাহায্যেই এই প্রযুক্তিতে তথ্যের আদানপ্রদান হবে। ফলস্বরুপ বর্তমান পৃথিবীর ইন্টারনেট বা কম্পিউটারের চেয়ে হাজার গুণ দ্রুত সম্ভব হবে আগামীর প্রযুক্তি।

উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অজয় নাহাটা এবং অধ্যাপক ভ্যালি ভারদেনি-র তত্ত্বাবধানে, ৬ই নভেম্বর নেচার কমিউনিকেশন পত্রিকায় গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।

নতুন এই প্রযুক্তিতে টেরাহার্জ রেঞ্জে চলবে। ইনফ্রারেড ও রেডিও তরঙ্গের মাঝামাঝি এই এনার্জি ব্যান্ড ১০০-১০,০০০ গিগাহার্জ অবধি কাজ করে, যেখানে আমাদের সেলফোনের রেঞ্জ বড়জোর ২.৫ গিগাহার্জ। বিজ্ঞানীরা আলোক কম্পাঙ্ককে ব্যবহার করে অতুলনীয় গতিবেগ সম্পন্ন তথ্যবাহী যন্ত্র তৈরিতে সক্ষম হবেন বলেই আশা।

নাহাটা ও ভারদেনি একটা ধাঁধার সমাধান অবশ্য করে ফেলেছেন ইতিমধ্যেই। একটুকরো সিলিকন পাতের উপরে যদি বহুস্তরীয় পেরোভাস্কিট রাখা হয়, তবে তার মধ্যে দিয়ে যাওয়া টেরাহার্জ কম্পাঙ্ককে স্রেফ একটা হ্যালোজেন ল্যাম্পের সাহায্যেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সে। বৈদ্যুতিন যোগাযোগের জন্য টেরাহার্জ কম্পাঙ্কের বিস্তার নিয়ন্ত্রণই মুখ্য ব্যাপার।

ইতিমধ্যেই ব্যয়বহুল উচ্চশক্তির লেসার আলো ব্যবহার করে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে, ততটা ফলপ্রসূ হয়নি যদিও। এই পরীক্ষার ক্ষেত্রে হ্যালোজেন ল্যাম্পের শক্তিতেই কম্পাঙ্কের বিস্তার কিছুটা প্রভাবিত হয়। এবং এর সাথে গুরুত্বপূর্ণ কোন বর্ণের আলো। একটি সিলিকন পাতের উপর অনেকগুলি পেরোভাস্কিট রাখার দরুন পাতের প্রতিটা ক্ষেত্রই আগত পৃথক বর্ণের আলো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সাধারণত সিলিকনের মতো প্রচলিত অর্ধপরিবাহী ব্যবহার করে এ সুবিধা পাওয়া যায় না।

নাহাটা বলছেন, নতুন পদ্ধতি অনেক বেশী সহজ ও সময়সাশ্রয়ী। সিলিকনের কর্মক্ষমতা আলোক রশ্মির শক্তির উপর নির্ভর করে, আলোর বর্ণের উপর নয়। তাই সিলিকনের অনেক জাদুই এখনও অজ্ঞাত আছে, যা আমাদের ভবিষ্যতে দিতে পারে কল্পনাতীত দ্রুততা।

ভারদেনি জানাচ্ছেন পেরোভাস্কিটের সহজ ও প্রায় ব্যয়হীন ব্যবহারের কথা। এজন্য তাঁরা স্পিন কাস্টিং নামক পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। এতে সিলিকন পাতটি ঘুরতে থাকে আর অভিকেন্দ্র বলের প্রভাবে পেরোভাস্কিটের দানাগুলি সুষম ভাবে পাতটিতে বন্টিত হয়।

যদিও তিনি এই যৌগটিকে হাইব্রিড বলতেই চাইছেন। পেরোভাস্কিট জৈব পদার্থ থেকে এমনকি অজৈব প্লাস্টিক থেকেও পাওয়া যেতে পারে। এখনও বছর দশেক লাগবে এই প্রযুক্তিকে বিপণনযোগ্য করে তুলতে, তবে নিঃসন্দেহে বিজ্ঞানের এ এক মহান প্রাপ্তি- তেমনই মত অধ্যাপক অজয় নাহাটার।