চকচকে গ্লিটারের কালো দিক

চকচকে গ্লিটারের কালো দিক

চকচক করলেই সোনা হয় না। বাংলায় এই প্রবচনের সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। কিন্তু আমরা কী জানি গ্লিটার বা চিকচিকি কণা পরিবেশের পক্ষে বেশ ক্ষতিকারক। এমনটাই দাবি করছে এক নতুন গবেষণা। গবেষণা অনুসারে মজা, হৈ হুল্লোড়ে গ্লিটার ব্যবহৃত হলেও তার একটি অন্ধকার দিক রয়েছে। নতুন গবেষণায় জানা গেছে, গ্লিটারের কারণে সূর্যালোক জলাধারে প্রবেশ করতে পারে না ফলত কিছু জলজ উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণের ক্ষমতাকে সম্ভাব্যভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে। গ্লিটার কিন্তু মূলত ছদ্মবেশে এক ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিক যার অবদান দূষণের ক্ষেত্রে কিছু কম নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্লিটারের উপর সম্প্রতিকালে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
মাইক্রোপ্লাস্টিক হওয়ার সুবাদে গ্লিটার পচনশীল নয় তাই পরিবেশে ধীরে ধীরে জমা হতে থাকে। এবং যেহেতু প্রায়শই বর্জ্য জল শোধনাগারের ছঁকনিতে গ্লিটার ধরা যায় না তাই সহজেই এগুলো জলপথে মিশে গিয়ে জলাধারে জমা হতে থাকে এবং মিঠা জলের জলজ জীবনকে ক্ষতি করতে থাকে এবং অবশেষে সমুদ্রের জল দূষিত করে। ব্রাজিলের ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অফ সাও কার্লোস (UFSCar) এর গবেষকরা আরও একটি সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। গ্লিটারের কণাগুলো মাইলার নামক একধরনের প্লাস্টিক থেকে তৈরি আর এই মাইলার হল প্রসারিত পলিথিন টেরেফথালেট (PET) থেকে তৈরি একটি পলিয়েস্টার ফিল্ম। গবেষকরা দেখেন যে গ্লিটার প্রায়শই অ্যালুমিনিয়াম, বিসমাথ, লোহা বা টাইটানিয়ামের ধাতব আবরণযুক্ত। এই ধাতুর উপস্থিতি জলজ উদ্ভিদকে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পেতে বাধা দেয়। গবেষকদের ধারণা সালোকসংশ্লেষণের সময় সম্ভবত মাইক্রোপ্লাস্টিক কণার ধাতব পৃষ্ঠ আলোকে প্রতিফলন করে আর সেই কারণেই সালোকসংশ্লেষণ বাধাপ্রাপ্ত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে গ্লিটারের অনুপস্থিতিতে সালোকসংশ্লেষণের হার ১.৫৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল কারণ জলে ক্ষুদ্র চিকচিকি কণার উপস্থিতি আলোর পরিমাণ হ্রাস করেছে এবং উদ্ভিদের শ্বাস-প্রশ্বাসও কম বেশি প্রভাবিত করেছে। জলজ বাস্তুতন্ত্রে আলোর মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে জীব জগতের উপর এর প্রতিক্রিয়া যাচাই করতে আরও গবেষণা প্রয়োজন তবে গবেষকদের মতে গ্লিটারের সাথে আমাদের সম্পর্ককে পুনঃমূল্যায়ন করার সময় এসেছে। আপাতত সমাজকে সতর্ক করা গুরুত্বপূর্ণ যে সালোকসংশ্লেষণের হারে পরিবর্তন, অন্যান্য আরও পরিবর্তনের সাথে যুক্ত যা আমাদেরকে আরও সরাসরি প্রভাবিত করে, যেমন জলজ পরিবেশে খাদ্য শৃঙ্খলে প্রাথমিক উৎপাদনে হ্রাস। তাই গ্লিটারের অন্য বিকল্পের দিকেই আমাদের যাওয়া উচিত। গবেষণাটি নিউজিল্যান্ড জার্নাল অব বোটানিতে প্রকাশিত হয়েছে।