চীনে সৌরশক্তির আশার মাঝেই বায়ুদূষণের ভ্রূকুটি

চীনে সৌরশক্তির আশার মাঝেই বায়ুদূষণের ভ্রূকুটি

সৌরশক্তির বণ্টনের হার দ্রুত বাড়ছে চীনদেশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার ১০% সৌরবিদ্যুৎ দিয়েই মেটানোর লক্ষ্য নিয়েছে চীন। কিন্তু এই পরিকল্পনায় প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বায়ুদূষণ। সূর্য থেকে আলো সোলার প্যানেলে আসার আগেই তা অবরুদ্ধ হচ্ছে দূষণের জন্য। এই সমস্যা যদিও উত্তর ও পূর্ব চীনেই প্রকট।

শীতকালে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, বায়ুদূষণে সর্বাধিক জর্জরিত উত্তর ও পূর্ব চীনে বায়ুতে এরোসল বৃদ্ধির ফলে ৩৫% সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সূক্ষ্মতর বিচারে প্রতিদিন যা প্রায় দেড় কিলোওয়াট-ঘণ্টা প্রতি বর্গমিটার সোলার প্যানেলের জন্য।

জীবাশ্ম জ্বালানীর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের দরুনই বাতাসে এরোসল ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। এরোসলের মধ্যে সালফেট, নাইট্রেট, ব্ল্যাক কার্বন, বাদামী বর্ণের জৈব পদার্থ ইত্যাদি পড়ে। এদের উপস্থিতিতে সূর্যের আলোর এই নিস্তেজ দশা। কিন্তু চীনদেশে ইতিপূর্বে সৌরশক্তির উৎপাদনে এরোসলের ক্ষতিকারক প্রভাব নিয়ে অন্য কোনো গবেষণা হয়নি।

ভারত বা চীনের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিতে মারাত্মক বায়ু দূষণের কারণেই সৌরশক্তি প্রচলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরোসলের ভূমিকা তারা মাথায় রাখেন না পরিকল্পনার সময়ে। তবে, এটা অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে উঠতে পারে- এমনটাই জানাচ্ছেন মুখ্য গবেষক জিয়ায়ুন (চার্লস) লি । উনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পি এইচ ডি গবেষক।

বিজ্ঞানীরা সোলার ফোটোভোল্টেইক পারফরমেন্স মডেল নামক প্রযুক্তির সাথে নাসা’র কৃত্রিম উপগ্রহ প্রেরিত তথ্যর সাহায্য নিয়ে সূর্যরশ্মির দেদিপ্যমানতা পরিমাপে সমর্থ হয়। সাথে সাথে তারা এরোসলের উপাদানগুলিও বিশ্লেষণ করে দেখেছেন পৃথকভাবে নয়টি পরীক্ষায়। ২০০৩ থেকে ২০১৪ সাল অবধি গবেষণাটি হাতেকলমে সারা চীনদেশ জুড়েই করা হয়েছিল ।

কণাজাত দূষণগুলি মূলত তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, যানবাহন, জৈবজ্বালানীর দহন বা ধুলোঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলেই হয়ে থাকে। সৌরশক্তি উৎপাদনের প্রধান অন্তরায় এই কণাদূষণ- এমনই মতপ্রকাশ করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়( বার্কলে)-র প্রাক্তন অধ্যাপক ড্যানিয়েল কামেন। প্রোফেসর কামেন এই গবেষণার সাথে যুক্ত না থাকলেও, সহমত পোষণ করে তিনি বলছেন, বায়ুদূষণের কারণে ঠিক কতটা পরিমাণে সৌর বিকিরণ মাটিতে এসে পৌঁছাচ্ছে, তার মূল্যায়ন যথাযথ বায়ুমণ্ডলীয় রসায়নের মডেলের দ্বারাই সম্ভব হয়েছে। দূরদর্শিতার সাথে তিনি জানাচ্ছেন এই একই পদ্ধতি প্রযুক্তিতে পরিবেশবান্ধব শক্তির উপযোগিতাও নির্ধারণ করা যাবে।

জিয়ায়ুন লি’র কী পরামর্শ দিচ্ছেন ভারত ও চীনকে ? – দুটি দেশেই যত শীঘ্র সম্ভব এরোসল নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করে ব্যাপকভাবে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের পথ প্রশস্ত করতে হবে। অপ্রচলিত শক্তির স্বাস্থ্যকর আঙ্গিক অবশ্যই আছে। আবার অন্যদিকে, সৌরশক্তির প্রচলনে জীবাশ্ম জ্বালানীর উপর সভ্যতার চূড়ান্ত নির্ভরশীলতা কিছুটা হলেও হ্রাস পায়।

নতুন এই অনুসন্ধানে জানা যাবে দেশের ঠিক কোন প্রান্তে সৌর প্রযুক্তির উপযুক্ত পরিকাঠামো আছে। শিল্প অধ্যুষিত শহুরে এলাকাগুলিতেই এরোসল দূষণের মাত্রা সর্বাধিক। অথচ, দূরবর্তী স্বল্প জনবসতির অঞ্চলগুলিতে বাতাস অনেক বেশী নির্মল স্বাস্থ্যকর। সেই সমস্ত জায়গাতেই শক্তিকেন্দ্র স্থাপন করা জরুরী। তাতে বেশীমাত্রায় শক্তি উৎপাদন করে সরবরাহের মূল্যের সাথে সমন্বয় রক্ষা করার কাজটা নির্বিঘ্নেই পারেন নীতি-নিয়ামকগণ।

গবেষণার সাথে যুক্ত অধ্যাপক ডেনিস মাওজেরাল বলছেন, আগে মেঘের আনাগোনাই সৌরশক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা ছিল, কিন্তু এই প্রথম বায়ুদূষণকেও সেই তালিকায় রাখা হল ।