জলের নীচে জঙ্গল, আয়তনে ভারতের দ্বিগুণ

জলের নীচে জঙ্গল, আয়তনে ভারতের দ্বিগুণ

অ্যামাজন, বোর্নিও বা কঙ্গোর মতো বৃষ্টিঅরণ্যের নাম তো অনেকেই শুনেছে। সর্বাধিক বিস্তৃত বনাঞ্চল বললে রাশিয়া থেকে ক্যানাডা পর্যন্ত ব্যাপ্ত বোরিয়েল অরণ্যের খবরও রাখে কেউ কেউ। কিন্তু সমুদ্রবনানী? অর্থাৎ সাগরের জলের নীচে জঙ্গল। তাও কি সম্ভব?

বড়ো বড়ো হলদে বাদামি লম্বা শ্যাওলার ঝোপ, আরও হরেকরকম সামুদ্রিক আগাছা নিয়ে আয়তনে কম নয় জলের নীচে জঙ্গল। সবকটার নামই এখনও দিয়ে উঠতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। কিন্তু, আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ উপকূল জুড়ে কিংবা দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার প্রবাল প্রাচীরের আশপাশে বেশ বড়ো এলাকা দখল করে রয়েছে সমুদ্রবনানী। যোগ করলে দুটো গোটা ভারতবর্ষের সমান বা তারও বেশি।

কিন্তু দূষণের বিষ থেকে নিস্তার নেই এই গোপন জঙ্গলেরও। সামুদ্রিক তাপপ্রবাহের হিড়িক বাড়ছে, সঙ্গে দোসর আবার বিশ্বব্যাপী জলবায়ু বদলের ভ্রূকুটি। যদিও কার্বন শোষণে ওস্তাদ সাগরের নীচে থাকা গাছগাছালি। তাদের মধ্যে বৃহৎ প্রজাতির উদ্ভিদও আছে, যেমন সামুদ্রিক বাঁশ বা লম্বা শ্যাওলা। জলের অতলে বিবর্তিত আগাছার গঠন অনেকটাই আলাদা। বায়ুপূর্ণ শরীর নিয়ে তারা দিব্বি বেলুনের মতো জলের নীচে ভেসে থাকতে পারে। কচুরিপানার দাম যেন। অন্য প্রজাতিগুলোর কাণ্ড খুবই শক্ত, তাতে সোজা হয়ে দাঁড়াতে সুবিধে হয়। সালোকসংশ্লেষও চলতে থাকে।

৬ থেকে ৭.২ মিলিয়ন বর্গমিটার জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে সমুদ্রবনানী। আয়তনে অ্যামাজনের জঙ্গলের চাইতে বড়ো। অস্ট্রেলিয়ার তিন গবেষকের কাজ থেকেই সন্ধান মিলেছে জলের নিচের এই অভিনব জঙ্গলের। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আলবার্ট পেসারোডোনা আর প্রোফেসর থমাস ওয়ের্নবার্গ এবং স্কুল অফ বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের পক্ষ থেকে কারেন ফিলবি-ডেক্সটার যুক্ত ছিলেন গবেষণায়।

খুব দ্রুত বাড়ে সামুদ্রিক আগাছা। অর্থাৎ কার্বন ডাইঅক্সাইডের চাহিদাও তাদের অনেকটাই বেশি। সমুদ্রের জল বা তার উপরের বায়ুমণ্ডল থেকে বিপুল পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এরা। যদিও পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া, ক্যানাডার পূর্বাঞ্চল বা ক্যালিফোর্নিয়ার মতো জায়গায় দূষণের কারণে অনেকটাই নিঃশেষ হয়ে গেছে বিস্তীর্ণ সমুদ্রবনানী। আবার উল্টোদিকে, বরফ যত গলবে আর সাগরের গড় উষ্ণতা যত বাড়বে ততই ঘন হয়ে ওঠার সম্ভাবনা জলের নীচে এই জঙ্গলের। সুতরাং সামুদ্রিক অরণ্য নিয়ে জ্ঞান আর সচেতনতার উন্নতি প্রয়োজন। যাতে সংরক্ষণের বিষয়টা তলিয়ে ভাবা যায়। এমনটাই বলছেন অস্ট্রেলিয়ার ঐ তিন গবেষক।