ডাইনোসর রহস্য – ১০

ডাইনোসর রহস্য – ১০

ডাইনোসরের পায়ের জীবাশ্মে নতুনের সন্ধান!

যেদিন পৃথিবীতে আছড়ে পড়েছিল একটি গ্রহাণু। চওড়ায় সে ছিল ৭৫ মাইল! প্রায় মাউন্ট এভারেস্টের আকারের। সেই গ্রহাণু বা নক্ষত্রটি আছড়ে পড়েছিল গালফ অফ মেক্সিকোর ওপর। তার সঙ্গে মহাসংঘর্ষেই সৃষ্টি হয় এক মহাবিস্ফোরণের। তাতেই বিলুপ্ত হয়ে যায় পৃথিবীতে থাকা সমস্ত ডানাবিহীন ডাইনোসর। সাড়ে ৬ কোটি বছর আগের সেই কাহিনীতেই পৃথিবী থেকে ডাইনোসর-বিলুপ্তির যাবতীয় গবেষণা বিশ্বাস করে এসেছে। এখনও করছে। কিছুটা ক্লিশেও হয়ে যেতে পারে এই ঘটনার কথা।
এই কাহিনীতে তৈরি হয়েছে নতুন এক রোমাঞ্চ। সেটাও তিন বছর হয়ে গেল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটায় তানিস অঞ্চলে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে প্রত্নতাত্বিকরা পেয়েছেন এক ডাইনোসরের পায়ের জীবাশ্ম। থিসেলোসরাস গোত্রের ডাইনোসর ছিল সেটা। সেই পা বিশ্লেষণ করে প্রত্নতাত্বিকরা শুধু রোমাঞ্চিত নন, উচ্ছ্বসিতও। কারণ তারা জেনেছেন সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে যেদিন গ্রহাণুটি পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে মহাবিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল সেদিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া ডাইনোসরদের মধ্যে এই থিসেলোসরাস গোত্রের ডাইনোসরটিও ছিল!
নর্থ ডাকোটার এই তানিসে বিভিন্ন রকমের প্রাণীর জীবাশ্ম সংরক্ষিত আছে। এটা প্রত্নতাত্বিকদের জানা। তাই তারা বার বার ছোটেন নর্থ ডাকোটার এই অঞ্চলে। কচ্ছপ এবং মাছ-সহ আরও অনেক হারিয়ে যাওয়া প্রাণীর জীবাশ্ম এই অঞ্চলে পেয়েছেন প্রত্নতাত্বিকরা। তানিসে গলে যাওয়া পাথরের মধ্যে মাছের ফুলকাও পেয়েছেন প্রত্নতাত্বিকরা। তাদের দাবী, গ্রহাণুর ধাক্কায় সৃষ্টি হওয়া মহাবিস্ফোরণের প্রতিফলন এটা। কিন্তু ম্যাঞ্চেষ্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের যে প্রত্নতাত্বিকরা ও বিজ্ঞানীদের যে দল তানিসে সেদিন মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে ডাইনোসরের পায়ের জীবাশ্মটি পেয়ে গিয়েছিল তার নেতৃত্বে থাকা রবার্ট ডি’পালমা বিবিসি-কে বলেছেন, “অবিশ্বাস্য! পাগলের মত অবস্থা হয়েছিল আমাদের! পায়ের জীবাশ্মটি পাওয়ার পর। দলের আরও এক অধ্যাপক ফিল ম্যানিংয়েরও এক অবস্থা। বিবিসি-কে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেছেন, “স্বপ্নেও ভাবিনি এই ডাইনোসরের পায়ের জীবাশ্মটি পাওয়া যাবে। হয়ত, পুরো কর্মজীবনে একবারই এই প্রাপ্তি হল।”
গোটা ঘটনাটি নিয়ে তিন বছর ধরে তথ্যচিত্র তৈরি করেছে বিবিসি। আগামী ১৫ এপ্রিল (শুক্রবার) সেই তথ্যচিত্র মুক্তি পেতে চলেছে।
রবার্ট ডি’পালমা কিন্তু ২০১৯-এ একটি গবেষণা পত্রিকায় এই তানিস অঞ্চলের গুরুত্বের কথা লিখেছিলেন। সাধারণত, জীবাশ্মবিদরা এরকম অঞ্চলের সন্ধান পেলে কোনও প্রত্নতাত্বিক সংস্থার সঙ্গে প্রথমে যোগাযোগ করেন। তাদেরকেই জীবাশ্ম উদ্ধার ও তাদের ট্রিটমেন্ট করার স্বত্ব দেন। কিন্তু রবার্ট সেটা করেননি। তিনি তানিসের খোঁজ পাওয়ার পর, কয়েকটি নামি গবেষণা সংস্থার অধ্যাপকদের ডেকে নিয়ে তাদের সঙ্গে যৌথভাবে প্রত্নতাত্বিক অভিযান চালাতে শুরু করেছিলেন। যতক্ষণ না এই অভূতপূর্ব আবিষ্কার হয়। লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের অধ্যাপক পল ব্যারেটকেও দেখানো হয়েছে এই ডাইনোসরের পা-টি। তিনি খুঁটিয়ে দেখে বলেছেন, “এরা মাংসাশী ডাইনোসরদের মত ছিল না। এদের গায়ে টিকটিকির মত আঁশ ছিল।” ব্যারেট আরও জানিয়েছেন, নক্ষত্র-পৃথিবী মহাসংঘর্ষের পরমুহুর্তেই অন্য ডাইনোসরদের সঙ্গে থিসেলোসরাস ডাইনোসররাও মারা গিয়েছিল। জীবাশ্মের গুণগত মান দেখেই বোঝা গিয়েছে ডাইনোসরের মারা যাওয়ার সময়।” আর তাতেই সৃষ্টি রোমাঞ্চের!