নিজেরই শ্রাদ্ধবাসরে আমন্ত্রিতদের সঙ্গে খোশমেজাজে আড্ডা

নিজেরই শ্রাদ্ধবাসরে আমন্ত্রিতদের সঙ্গে খোশমেজাজে আড্ডা

পরলোকে পাড়ি দিয়েছেন তিনি। 87 বছর বয়সে সংসারের মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে গমন করেছেন। সেই তিনিই কিনা ফিরলেন। ফিরলেন আবার নিজেরই শ্রাদ্ধবাসরে। গল্প করতে বড্ড ভালবাসতেন। ঠোঁটজুড়ে তাঁর প্রশস্ত হাসিটাই আবার দেখতে পেলেন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় (Funeral) আগত সক্কলে। না, ছবিতে নয়, ভিডিয়োতে। কেউ অবাক হলেন, কেউ বা ভয় পেলেন, কেউ আবার বললেন, “ডিজিটাল জমানা। তিনি হয়তো স্বর্গ থেকেই জ়ুম কলে আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন।” হেঁয়ালি নয়। এতদূর পর্যন্ত যা শুনলেন, সব সত্যি, সব সত্যি। খালি, ম্যারিনা স্মিথকে তাঁর শোকজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে থাকার সুযোগটা করে দিল কৃত্রিম মেধা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেনিজেন্স (Artificial Intelligence)। এমনটা আবার সম্ভব নাকি?
মিসেস স্মিথের দুই সন্তান- স্টিফেন ডি স্মিথ এবং হেদার মায়ো স্মিথ। ২০১৭ সালে দুজনে একটি সংস্থার জন্ম দিয়েছিলেন, যার নাম স্টোরিফাইল। এ এমনই এক সংস্থা, যা মৃত মানুষের সঙ্গে কথা বলতে সাহায্য করে। প্রয়াত ম্যারিনা স্মিথের দুই সন্তান তাঁদের মায়ের শ্রাদ্ধবাসরে, মায়েরই কথাবার্তা নিজেরা শুনতে ও অন্যদের শোনাতে তাঁর একটি ডিজিটাল ক্লোন তৈরি করেছিলেন। তার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল 20টি সিঙ্ক্রোনাইজ়ড ক্যামেরা, 3D ভিডিয়ো প্রযুক্তি, ডেপথ কিটস এবং অন্যান্য আরও স্টেট অফ দ্য আর্ট ইক্যুইপমেন্ট।
না, তবে মিসেস স্মিথ ও তাঁর শ্রাদ্ধবাসরে আগতদের মধ্যে কথোপকথনের বিষয়টি কিন্তু AI জেনারেট করেনি। বরং, ওই কৃত্রিম মেধা বা AI-কে এমন ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল যে, প্রশ্নের উত্তরগুলি স্বাভাবিক ভাবেই ওই AI থুড়ি প্রয়াত মিসেস স্মিথের ভিতর থেকে আসছিল। তার জন্য বড় একটি ভিডিয়োকে ছোট্ট ছোট্ট কয়েকটি ক্লিপে ভাগ করে নেওয়া হয়েছিল। অতিথিদের কাছ থেকে আসা প্রশ্নগুলি ম্যাচ করিয়ে AI সেই সঠিক ক্লিপটিকে প্লে করছিল। এদিকে শোকার্ত মানুষজন মিসেস স্মিথের একটি হলোগ্রাফিক ছবির সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন। সাধারণ মানুষ ঠিক যেমন ভাবে কথা বলে, সেই ভাবেই কথা বলছিল ম্যারিনা স্মিথের হলোগ্রাফিক ছবিটি।
মিসেস স্মিথের শ্রাদ্ধবাসরে আমন্ত্রিতদের একপ্রকার অবাক করে দিয়েছিল প্রয়াত মহিলার স্বচ্ছল, প্রাণবন্ত ভঙ্গিমায় কথোপকথন। যেভাবে রেকর্ড করা ছিল সেভাবেই কথোপকথন চালিয়েছে এই কৃত্রিম মেধা। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রি-রেকর্ডেড ছাড়া বা আগে থেকে ডেটা প্রবেশ না করিয়ে কি কোনও ভাবে এই কার্যসিদ্ধি সম্ভব? এ বিষয়ে বিবিসি-র কাছে মিসেস স্মিথের পুত্র স্টিফেন বললেন, “আমাদের সম্পর্কিত সব কিছুই আমাদের কাছে এক্কেবারে অনন্য। তাই, আপনি আমার একটি সিন্থেটিক সংস্করণ তৈরি করতে পারেন, এমন কোনও উপায় নেই। যদিও তা একান্তই আমার মতামত।”
মৃত ব্যক্তিদের এহেন ‘জীবন’ দানের কাজটি যে শুধু স্টোরিফাইল করছে বা করেছে এমনটা নয়। সিয়াটেলের লালো নামের এক সংস্থা ‘ডেথ টেক ড্রিভেন’ অ্যাপ নিয়ে হাজির হয়, যার সাহায্যে ব্যবহারকারীরা তাঁদের প্রিয়জনদের স্মরণ করতে অন্তরঙ্গ স্পেস তৈরি করে নিতে পারেন। সেই অ্যাপে আপনি ভিডিয়ো, ছবি, অডিও, এমনকি টেক্সট পর্যন্ত স্টোর করতে পারেন। স্মৃতির ভাণ্ডার তৈরি করার জন্য একটি পার্সোনালাইজ়ড জার্নি তৈরি করতে গাইড করবে অ্যাপটি।
দক্ষিণ কোরিয়ার স্টার্ট-আপ সংস্থা ডিপব্রেইন-ও এরকম স্টোরিফাইলের মতো একই পরিষেবা প্রদান করে থাকে। তাদের ‘রিমেমোরি’ নামক সার্ভিসটি ক্লায়েন্টদের প্রয়াত পরিবারের সদস্যদের রিক্রিয়েট করতে দেয়। মৃত ব্যক্তিদের ভার্চুয়াল অবতার তৈরি করা হয় তাদের ব্যক্তিত্ব, শরীর, কণ্ঠস্বর এবং অভিব্যক্তির উপর ভিত্তি করে। এদিকে মাইক্রোসফট একটি চ্যাটবট নিয়ে কাজ করছে, যেখানে মৃত ব্যক্তির তথ্য কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল অবতার তৈরি করে তাঁর আচরণ অনুকরণ করতে সক্ষম হয়।
ডিপ নস্ট্যালজিয়া নামে আরও একটি ডেথ টেক ড্রিভেন অ্যাপ রয়েছে, যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই অ্যাপটিও মৃত ব্যক্তির স্টিল ছবিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। ডিপ ফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অ্যাপটি যে কোনও স্থির চিত্রকে অ্যানিমেট করতে সক্ষম। একই ভাবে অস্টিনের স্টার্ট-আপ ইটারনেভা, হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনের মৃতদেহকে হিরেতে পরিণত করতে পারে। প্রজেক্ট ডিসেম্বর নামে আর একটি অ্যাপে আবার চ্যাটবটের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির সঙ্গে কথোপকথন সম্ভব।