পৃথিবীতে ফিরে নভশ্চরদের হাড়ের ক্ষয় হতে পারে

পৃথিবীতে ফিরে নভশ্চরদের হাড়ের ক্ষয় হতে পারে

সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, মহাকাশচারীরা দীর্ঘ সময় ধরে মহাকাশে থাকলে তাদের হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে নভশ্চররা মহাকাশে অন্তত ছ’মাসের মত অল্প সময়ের ব্যবধানে থাকেন, পৃথিবীতে ফেরার পর তাদের হাড়ের শক্তি এবং ঘনত্ব পুনরুদ্ধারে এক বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল।
বিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণ, হাড়ের ক্ষয় মূলত মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অভাবে হয়ে থাকে। তাদের দাবি মহাকাশ থেকে ফিরে আসার পর পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে মানুষের শরীরের হাড় হারানো শক্তির শুধু অর্ধেক পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। কানাডার ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক লেই গ্যাবেলের নেতৃত্বাধীন একটি দল এই বিষয়ে গবেষণা করেছে। স্পেসফ্লাইটে দীর্ঘসময় থাকার পর হাড়ের শক্তি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব কি না সেই নিয়ে গবেষকদের দলটি ৭ জন মহাকাশচারীর ওপর পর্যবেক্ষণ করছিলেন গত সাত বছর ধরে। তাদের মধ্যে ছিলেন চার জন পুরুষ আর তিনজন মহিলা। প্রত্যেকের বয়স ৪৭-এর আশেপাশে। সাত মাসের বেশি সময় ধরে তারা মহাকাশে ছিলেন। ওই মহাকাশচারীদের হাড়ের ঘনত্ব এবং শক্তি মাপার জন্য বিজ্ঞানীরা এইচ-আর-পিকিউসিটি নামের এক সুক্ষ যন্ত্র ব্যবহার করেছিলেন। চুলের থেকেও পাতলা পায়ের হাড়ের ঘনত্ব ও শক্তি মাপা যায় ওই যন্ত্রের সহায়তায়।
গ্যাবেল জানাছেন, মানুষের শরীরের হাড় জীবন্ত একটি অঙ্গ হওয়ায় তারা সবসময়ই সক্রিয়। ক্রমাগত তারা নিজেদের পুনরুদ্ধার করে চলেছে। কিন্তু মাধ্যাকর্ষণ শক্তি যেহেতু হাড়ের ওপর প্রভাব ফেলে তাই তার অভাবে মহাকাশচারীদের হাড় তার শক্তি হারাতে থাকে। গ্যাবেল জানিয়েছেন, বার্ধ্যকের কারণে ১০ বছরে মানুষের হাড়ের যে পরিমাণ ক্ষয় হয় সেটা মাধ্যাকর্ষণের অভাবে ছয় মাসের হাড়ের ক্ষয়ের সমান! গবেষণাকারীদের মতে ছয় মাসের বেশি সময় মহাকাশে থাকলে মহাকাশচারীদের হাড় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক বছর থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হাড়ের শক্তি অর্ধেকটা অন্তত পুনরুদ্ধার করা যায় বলে মত বিজ্ঞানীদের। তবে মহাকাশে থাকা নভশ্চরদের হাতের নিচের দিকের হাড় সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। গ্যাবেল বলছেন তার কারণ, এই হাড় শরীরের ওজন সেভাবে বহন করে না বলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অভাব থাকলেও তার শক্তিক্ষয় হয় না।