ফুরিয়ে যায় কেন সময়, বা কাটতেই চায় না?

ফুরিয়ে যায় কেন সময়, বা কাটতেই চায় না?

সব্বাই টের পাই প্রতিদিন, সময়ের বেগ যেন বাড়ে কমে। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ‘কতটা সময় হল?’ এই ধারণাটা আমাদের মানসিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। নির্ভর করে কেমনভাবে আমরা সাড়া দিই আলাদা আলাদা ঘটনায়।

ধরা যাক শিশুদের কথাই। কম পরিমাণ সময়ে ঘটতে থাকা ব্যাপারগুলো অনেক বড়ো জায়গা জুড়ে থাকে। বড়বেলায় তেমন হয় না। পয়লা বৈশাখের জন্যে অপেক্ষা করা পাঁচ বছরের শিশুর কাছে অসহ্য লাগতে পারে। কিন্তু ৩৬৫ দিন হুহু করে কেটে যায় একজন প্রাপ্তবয়স্কের।

যদিও ব্যাপারটা সহজ এমন দু চার কথার নয়। সময়ের এই গোলকধাঁধার চাবি হয়তো বা আছে মগজের গভীরেই। উত্তর ক্যারোলিনার ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের আদ্রিয়ান বেজান বলছেন, বয়েস বাড়ার সাথে সাথে মাথার কাজ করার বেগ কমে যায় কারণ স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতাও বাড়তে থাকে। অর্থাৎ মস্তিষ্কের প্রেরিত সংকেত অনেক বেশি সময় ধরে বেশি পথ অতিক্রম করতে পারে। কিন্তু মানুষের মাথার বয়েস যত বাড়ে প্রতি সেকেন্ডে তথ্য গ্রহণ করার হারও ততই কমে। স্মৃতিতে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাড়তি আর অস্থায়ী তথ্য কম জমে। এই নির্দিষ্ট সময়ের পরিমাণকে একটা এপিসোড বলা যায়। অল্প বয়সে, অনেককিছুই আমরা প্রথমবারের জন্যে দেখি, ফলে একটা এপিসোডে বেশি তথ্য ভর্তি হতে পারে। এ যেন ঠিক স্লো-মোশান ক্যামেরার কারসাজি যাতে প্রতি সেকেন্ডে হাজারের বেশি ছবি তোলা যেতে পারে। অর্থাৎ আমাদের অভিজ্ঞতার বিচারে সময় খুব ধীরে বইতে থাকে।

আমরা যখন মজায় থাকি বা ভোগবিলাসে, সময় খুব দ্রুত কেটে যায় মনে হয়। আবার উল্টোটা ঘটে যখন একঘেঁয়ে কাটে। ‘Embodied Cognition’ তত্ত্ব বলছে, মানুষের শারীরিক অনুভূতিগুলোই চারপাশের জগতের ব্যাপারে আমাদের ধারণা তৈরি করে দেয়। হৃদপিণ্ডের ধুকপুক বা খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করা – শরীরে এমন অনেক ছন্দ রয়েছে। অঙ্গ প্রত্যঙ্গের এই বিবিধ গতিবিধিই ‘কতটা সময় কাটল?’ এই ধারণাটাকে মস্তিষ্কে পাঠায়। শরীরের পাঠানো এই সব আলাদা আলাদা সংকেত মগজের ভেতরে ইন্সুলা বলে একটা জায়গায় এক হয়। ফ্রন্টাল আর টেম্পোরাল লোবের মাঝখানে মাথার অনেকটা গভীরে এই ইন্সুলা।

জার্মানির ফ্রেইবুর্গ শহরে, ইন্সটিটিউট অফ ফ্রন্টিয়ার এরিয়াজ ইন সাইকোলজি অ্যান্ড মেন্টাল হেলথে কাজ করছেন প্রফেসর মার্ক উইটম্যান। সেখানে তিনি এক মজার পরিক্ষা করেছিলেন। লোকজনকে উচ্চস্বরের শব্দ  শুনিয়ে জানতে চাওয়া হয় কতক্ষণ ধরে তা শোনানো হল। সে সময় তাদের নার্ভের গতিবিধি এফএমআরই যন্ত্রে দেখছিলেন প্রফেসর উইটম্যান। তাদের ইন্সুলা অনেক বেশিমাত্রায় কাজ করছিল। কিন্তু যখন বলা হল আওয়াজ বন্ধ হলেই বোতাম টিপে জানাতে হবে, তখন ইন্সুলায় নড়নচড়ন কম। উইটম্যান মনে করছেন, প্রথম পরিক্ষার ক্ষেত্রে তাদের শরীরের সংকেতও মাপতে চাইছিল কতখানি সময় পার হয়েছে।

শরীরের ছন্দের দিকে মনোযোগ যখনই বাড়বে, উইটম্যানের মতে তখনই সময় ধীর গতিতে চলবে। এর থেকেই বোঝা যায় খুব খিদের মুখে বা দারুণ শীতে কেন সময় কাটতেই চায় না বলে মনে হয়। উল্টোদিকে যখন আমরা বাইরের কোনও বিষয়ে মগ্ন অর্থাৎ শরীরের খেয়াল নেই, তখন সময় দ্রুত কেটে যায়।