ব্যাটারির মাধ্যমে ক্যান্সার চিকিৎসার এক অভিনব পদ্ধতি

ব্যাটারির মাধ্যমে ক্যান্সার চিকিৎসার এক অভিনব পদ্ধতি

একজন ব্যক্তি যদি একটা বদ্ধ ঘরের সমস্ত অক্সিজেন গ্রহণ করে নেন ব্যপারটা ভয়ংকর হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এই একই কাজ যদি একটা ব্যাটারি করে? যদি একটা ব্যাটারি একটা টিউমার থেকে অক্সিজেন শুষে নেয় তবে কিন্তু সেটা একটা ভালো কাজ বলে গণ্য হতে পারে। আর এই গবেষণাটি ৩১শে মার্চ সায়েন্স অ্যাডভান্স পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ইঁদুর নিয়ে এই গবেষণায় দেখা গেছে ইঁদুরের টিউমারের চারপাশে মোড়ানো একটি ছোটো স্ব-চার্জিং ব্যাটারি ওই টিউমারের ক্যান্সার কোশ থেকে অক্সিজেন অপসারণ করে ক্যান্সার থেরাপিতে সাহায্যে করে। যে সমস্ত ইঁদুর স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল তাদের বুকের টিউমারের চারপাশে একটা ছোটো ব্যাটারি মোড়ানো ছিল। দেখা গেছে এই ধরনের ক্যান্সার থেরাপির সাহায্যে দু সপ্তাহের মধ্যে টিউমারের পরিমাণ ৯০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে বুকে শক্ত টিউমার হয় যা প্রায়শই দ্রুত বৃদ্ধি পায় — এত দ্রুত যে টিউমারের বৃদ্ধি তার রক্ত সরবরাহের চেয়ে দ্রুত হয় । সেক্ষেত্রে, পার্শ্ববর্তী কলার তুলনায় অনেক টিউমারের কেন্দ্রে অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকে। এই পরিস্থিতিকে হাইপোক্সিয়া বলে।

সাংহাইয়ের ফুদান ইউনিভার্সিটির পদার্থ বিজ্ঞানী ইয়ংইয়াও জিয়া, যিনি ব্যাটারি সংক্রান্ত সামগ্রীতে বিশেষজ্ঞ, তাঁর মতানুসারে- হাইপক্সিয়া একটা দুমুখো তলোয়ারের মতো। টিউমারে কম অক্সিজেনের মাত্রা হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী কোশগুলো ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যথেষ্ট সময় জীবিত থাকতে পারে না বায়োমেডিকাল সায়েন্স নিয়ে অধ্যয়নরত ফুদানের ফ্যান ঝাং বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, যে সমস্ত টিউমারের কোশে অক্সিজেনের মাত্রা কম সেই হাইপোক্সিক কোশ রেডিওথেরাপি বা প্রথাগত কেমোথেরাপিতে কোনো রকম প্রতিক্রিয়া দেখায় না কারণ এই মারাত্মক ডোজ সরবরাহ করার জন্য পর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহ সেখানে নেই। অপরদিকে, হাইপোক্সিয়া নির্ভুল চিকিত্সার জন্য টিউমারের সুনির্দিষ্ট অবস্থান জানিয়ে দেয়।
হাইপোক্সিয়া-অ্যাক্টিভেটেড প্রোড্রাগ নামক রাসায়নিকের জন্য হাইপোক্সিয়া একটা পথনির্দেশক হিসাবে কাজ করতে পারে। ডালাসের ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস সাউথ ওয়েস্টার্ন মেডিক্যাল সেন্টারের আণবিক জীববিজ্ঞানী কিং ঝাং বলেন, এই কেমোথেরাপিউটিক ওষুধগুলো এমন এক সংযোগকারী রাসায়নিকের সাথে যুক্ত হয় যা নিশ্চিত করে যে ওষুধটি শুধুমাত্র সেই পরিবেশে সক্রিয় হয়ে উঠবে যেখানে অক্সিজেনের মাত্রা কম।
কিন্তু ক্লিনিকাল ট্রায়ালে এই হাইপোক্সিয়া-অ্যাক্টিভেটেড প্রোড্রাগ খুব বেশি উপযোগী হয়ে ওঠেনি কারণ, শক্ত টিউমারগুলো সাধারণত সমানভাবে হাইপোক্সিক হয় না বা যথেষ্ট পরিমাণে হাইপোক্সিক নয়। জিয়া এবং ফ্যান ঝাং টিউমারগুলোকে আরও হাইপোক্সিক করার উপায় খুঁজে বের করতে চেয়েছিলেন যাতে প্রোড্রাগগুলো আরও কার্যকারী হয়ে উঠবে। তাই গবেষকরা একটা ক্ষুদ্র, নিয়ন্ত্রিত ব্যাটারি স্থাপন করেন যা আংশিকভাবে একটা টিউমারের চারপাশ আবৃত করে রাখতে পারে। ব্যাটারির জিঙ্ক ইলেকট্রোড বা বিদ্যুদ্বাহক পরিবেশ থেকে অক্সিজেন নিয়ে নিজে নিজেই চার্জড হয়ে ওঠে। এর ফলে এক অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেনের জোড় তৈরি হয় যা ডিএনএকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে কিন্তু শরীরের কোশ এই অক্সিজেন ব্যবহার করতে সক্ষম নয়। এই পদ্ধতিতে পরিবেশে যে অক্সিজেন পাওয়া যায় তার বেশিরভাগটাই ব্যাটারি গ্রহণ করে প্রচুর প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেনের জোড় তৈরি করে। ফলত, ইঁদুরের টিউমারে ব্যাটারি লাগানোর দু সপ্তাহ পরে টিউমার তার আসল আকারের ২৬ শতাংশ পর্যন্ত সঙ্কুচিত হয়ে পরে। দেখা গেছে হাইপোক্সিয়া-অ্যাক্টিভেটেড প্রোড্রাগের সাথে মিলিত হলে, গড় টিউমারের আকার ৯০ শতাংশও কমে যেতে পারে