মহাকর্ষ তরঙ্গ নিয়ে দু চার কথা

মহাকর্ষ তরঙ্গ নিয়ে দু চার কথা

ব্রহ্মাণ্ডের সমস্তকিছুই যা উপরে দাঁড়িয়ে(?) বা ভেসে আছে তা হল স্পেস, বা স্থান। এটাকে সাদা চোখে স্থির কিংবা অব্যয় মনে হলেও আদপে তেমন না। সংকোচন প্রসারণের বৈশিষ্ট্য এর আছে। এই স্পেস আর টাইম (ঘড়ির সময় নয়) মিলিত হয়ে কাঁথার মতো গঠন তৈরি করে রাখে। এটাকেই একসাথে স্পেসটাইম বলে।
মহাবিশ্বের সব বস্তুই এই স্থানকালের বুননকে প্রভাবিত করতে পারে। অর্থাৎ, কুঁচকে দিতে পারে। যত ভারি বস্তু, স্থানকাল সংকুচিত হওয়ার প্রবণতাও তত বেশি। স্পেসটাইমের এই বিকৃত হওয়াটাই মহাকর্ষ হিসেবে ধরা দেয়। এমনকি কোনও বস্তু যখন গতিশীল হয়, স্থানকালের বুননে ছোট ছোট ঢেউ সৃষ্টি করে। ঠিক যেমন শান্ত পুকুরে ছুঁড়ে দেওয়া ঢিল। এই ঢেউয়ের পোশাকি নাম মহাকর্ষ তরঙ্গ বা গ্র্যাভিটেশানাল ওয়েভ।
এই তরঙ্গের উপস্থিতি প্রায় একশো বছর আগে অনুমান করতে পেরেছিলেন আইনস্টাইন। কিন্তু মাত্র কয়েক বছর আগে, ২০১৫ সালে পদার্থবিদরা প্রথম মহাকর্ষ তরঙ্গের প্রমাণ পান। কেন এতটা সময় লাগলো? বিস্তারিত হওয়ার সময় এই তরঙ্গের তীব্রতা কমতে থাকে। ফলে মহাকাশের অনেক দূরের কোনও বস্তুর উপস্থিতিতে যদি মহাকর্ষ তরঙ্গ তৈরি হয়, তা পৃথিবীতে পৌঁছতে সমস্ত শক্তিই শেষ করে ফেলে। ফলে শনাক্ত করার কাজটা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু দূরের বস্তু যদি বৃহদাকার হয়? যেমন ব্ল্যাকহোল? বা দানবীয় কোনও নক্ষত্র? তাহলে অবশ্যই মহাকর্ষ তরঙ্গকে যন্ত্রে ধরতে পারা যাবে।
অত্যাধুনিক লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশানাল ওয়েভ অবজারভেটরি বা সংক্ষেপে লিগো প্রথম শনাক্ত করতে পেরেছিল এই ধরণের তরঙ্গ। যখন দুটো ব্ল্যাকহোল একে অপরের উপর আছড়ে পড়েছিল, তা থেকে অযুত শক্তিশালী মহাকর্ষ তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। এই অতুলনীয় আবিষ্কারের জন্যে ২০১৭ সালে তিন বিজ্ঞানীকে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়। এরপর থেকে নানান উন্নত যন্ত্রে একাধিক বার মহাকর্ষ তরঙ্গকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে এতদিনে।