মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সহায়তায় ব্যাটারি

মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সহায়তায় ব্যাটারি

জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে কমাতে হবে কার্বন নির্গমনের মাত্রা— সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সমস্ত পরিবেশ সম্মেলনেই বার বার উঠে এসেছে এই প্রসঙ্গ। জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে বায়ু কিংবা সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়ানোর আবেদন জানিয়ে আসছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তাতেও শক্তি সঞ্চয়ের কাজ যথার্থভাবে করা যাছে না। বিশেষত, বায়ুশক্তি কিংবা সৌরশক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে শক্তির সঞ্চয়। এবার এই সমস্যার সমাধান করতে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে অভিনব ব্যাটারির প্রোটোটাইপ তৈরি করলেন এডিনবার্গের ইঞ্জিনিয়াররা। বর্তমানে শক্তি সংরক্ষণ বা সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় রাসায়নিক ব্যাটারি। আধুনিক সময়ে মূলত লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির ব্যবহার বাড়ছে সূচকীয় হারে। কিন্তু এই ব্যাটারি ব্যবহারেও দূষিত হয় পরিবেশ। কার্বন নির্গমনের থেকেও বেশি দূষণ তৈরি হয় লিথিয়াম আয়নের ব্যবহারে। তাছাড়া ব্যবহারের পর পরিতক্ত্য এই ব্যাটারির জন্য জল ও মাটির অবিরাম দূষণ হয়ে চলেছে। এই ব্যাটারি সমস্ত পরিবেশের জন্য সমানভাবে ব্যবহারযোগ্যও নয়। হিমশীতল মেরু প্রদেশে, পাহাড়ি অঞ্চলে কিংবা উত্তপ্ত মরু অঞ্চলে অনেকটাই কমে যায় এই ব্যাটারির কার্যকারিতা। সেই কারণেই বিকল্প ব্যাটারি হিসাবে মহাকর্ষ ব্যাটারি বা গ্র্যাভিটি ব্যাটারির প্রস্তাব গবেষকদের। এডিনবার্গের গবেষকরা তৈরি করেছিলেন ১৫ মিটার উঁচু একটি স্টিলের টাওয়ার। সৌরশক্তি বা বায়ুশক্তি কাজে লাগিয়ে হাইড্রলিক ক্রেনের মাধ্যমে এই টাওয়ারে সঞ্চয় করা হয় ভারি কংক্রিটের ব্লক। ৫০ টন ওজনের এই টাওয়ার প্রায় কয়েক হাজার ব্লক ধারণ করতে সক্ষম। শক্তির প্রয়োজন পড়লে এই ব্লকগুলিকেই স্প্রিং-এর মাধ্যমে নামিয়ে আনা হবে ওপর থেকে। ফলে, ব্লকের স্থিতিশক্তি পরিণত হবে গতিশক্তিতে। অনেকটা গ্র্যান্ডফাদার ক্লক বা পেন্ডুলাম ঘড়ি যেভাবে কাজ করে, সেভাবেই কাজ করবে এই টাওয়ার। শুধু উপযুক্ত পরিকাঠামোর মাধ্যমে গতিশক্তিকে বদলে নেওয়া হবে তড়িৎশক্তিতে। ইতিমধ্যে ২৫০ কিলোওয়াট-আওয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হয়েছে এডিনবার্গের স্টার্ট আপ সংস্থা গ্র্যাভিটিসিটি-র তৈরি এই প্রোটোটাইপটি। যা অনায়াসেই একদিনের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে ৭৫০টি পরিবারে।