সাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও যৌক্তিক বিশ্লেষণ

সাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও যৌক্তিক বিশ্লেষণ

সাধারণ বুদ্ধিমত্তা বা যৌক্তিক বিশ্লেষণ বা যুক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা এই গালভরা বিশেষণগুলির সাথে কি প্রথাগত শিক্ষার কোনো যোগ আছে? কি মনে হয় আপনার? আসুন একটু আলোচনা করে দেখা যাক| দেখবেন যখনই কোনো বিষয় নিরপেক্ষ পরীক্ষা হয় (হতে পারে সেটা কোনো চাকরির পরীক্ষা বা মেধা যাচাইয়ের পরীক্ষা) সেখানে প্রশ্নপত্রে সাধারণ জ্ঞান বা প্রাথমিক গণিত সংক্রান্ত প্রশ্ন ছাড়া কেবলমাত্র উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলির উপরেই প্রশ্ন থাকে| তার কারণ এই জাতীয় পরীক্ষা পদ্ধতিতে কোনো একটি বা একাধিক নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর পরীক্ষার্থীর জ্ঞান যাচাই করা হয় না বরঞ্চ তার উল্টো অর্থাৎ কোনো একটি (বা একাধিক) বিষয় (যেমন ভূগোল, রসায়ন ইত্যাদি) পড়াশোনা করা পরীক্ষার্থীরা যাতে বিশেষ সুবিধা না পায় তা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে ওঠে| এই পরীক্ষাগুলির মূল উদ্দেশ্য হলো অসংখ্য পরীক্ষার্থীর মধ্যে থেকে চাকরির পদ বা উপলব্ধ বৃত্তির সংখ্যা অনুযায়ী কেবলমাত্র যোগ্যতমদের বেছে নেওয়া| লক্ষ্য করলেই দেখবেন এই ধরণের পরীক্ষাগুলির যোগ্যতার মানদণ্ড হিসাবে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে ডিগ্রিপ্রাপ্ত হতে হয়না| মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, যেকোনো শাখায় স্নাতক বা স্নাতকোত্তররাই ক্ষেত্রবিশেষে এইসব পরীক্ষার পরীক্ষার্থী হবার যোগ্য| এবার আবার ফিরে আসি সাধারণ বুদ্ধিমত্তা বা যৌক্তিক বিশ্লেষণের বিষয়টিতে| মেধা যাচাই এর এই জাতীয় পরীক্ষায় হয়তো নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যার ক্রম , পরপর কিছু অক্ষর অথবা নির্দিষ্ট কিছু জ্যামিতিক আকারের ক্রম দেওয়া থাকে| বিশ্লেষণমূলক পদ্ধতি মেনে সেই ক্রমের লুপ্ত সংখ্যা (বা উপযুক্ত জ্যামিতিক চিত্র) অথবা সেই ক্রমগুলি কিভাবে ভবিষ্যতে অগ্রসর হবে সেটা নির্ণয় করতে হয়| অনেকক্ষেত্রে কিছু একটা তথ্যের উপর ভিত্তি করে বেশ কিছু সম্বন্ধীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয়, কিন্তু সেই উত্তর দেওয়ার সূত্র সেই তথ্যের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে| উদাহরণ দিলে হয়তো বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে উঠবে|
এই সমস্যাটির কথাই ধরা যাক:
দেওয়া আছে: A-B মানে A হলো B এর পিতা
A+B মানে A হলো B এর কন্যা
A/B মানে A হলো B এর পুত্র
AXB মানে A হলো B এর স্ত্রী
তাহলে P, S এর পৌত্র বোঝাতে গেলে কি লিখবো? চারটি বিকল্প দেওয়া আছে|
(i) P+Q–S
(ii) P/QXS
(iii) P/Q+S
(iv) PXQ/S
এই সমস্যাটি যদি আপনি ইতমধ্যেই বিশ্লেষণ করতে শুরু করে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে গণিত বা অন্য কোনো বিষয় সম্পর্কে আপনার জ্ঞান আছে কি নেই তা ভাবারই প্রয়োজন হচ্ছে না| শুধু আপনার সঠিক যুক্তিজালই সমস্যাটি সমাধানের জন্য যথেষ্ট| যোগ, বিয়োগ, গুন্, ভাগ এই চিহ্নগুলি এক্ষেত্রে স্রেফ তাদের দুই প্রান্তের অক্ষরগুলির মধ্যে একেকটি সম্পর্ক নির্দেশ করছে| তবে প্রশ্নে এই সম্পর্কটি দেওয়া আছে এক ধাপে, কিন্তু সঠিক উত্তরটি পেতে গেলে আপনাকে সম্পর্কটি নির্ণয় করতে হবে দুই ধাপে, অর্থাৎ প্রথমে P ও Q এবং পরে Q ও S এর সঠিক সম্পর্কে আপনাকে পৌঁছতে হবে| যেহেতু P পৌত্র (অর্থাৎ পুংলিঙ্গ) তাই আপনি অনায়াসে (i) ও (iv) নং বিকল্পগুলি বাদ দিতে পারেন কারণ ওরা নির্দেশ করছে স্ত্রীলিঙ্গ| এইভাবে যত তাড়াতাড়ি আপনি ভুল বিকল্পগুলি বাদ দিয়ে ফেলতে পারবেন ততই দ্রুত সঠিক উত্তরের দিকে পৌঁছতে পারবেন| (ii) ও (iii) এর মধ্যে কোনটি সঠিক সেটি বোঝার জন্য আপনাকে এবার দ্বিতীয় ধাপের (অর্থাৎ Q ও S এর) সম্পর্কটি যাচাই করে নিতে হবে| এতে কোনো সন্দেহই নেই যে P কে যদি S এর পৌত্র হতে হয় তবে Q কে S এর পুত্র বা কন্যা হতেই হবে| গুন্ চিহ্ন স্ত্রী-নির্দেশক কিন্তু যোগ চিহ্ন কন্যা নির্দেশক তাই এক্ষেত্রে সঠিক উত্তরটি হলো বিকল্প (iii)| এই ধরণের হরেক সমস্যার ডালি নিয়ে সেজে ওঠে সাধারণ বুদ্ধিমত্তা বা যৌক্তিক বিশ্লেষণ ক্ষমতা নির্ণয়ের প্রশ্নপত্র| সেই কঠিন চ্যালেঞ্জের বাধা টপকে সাফল্য লাভ করতে পারলেই মেলে ভালো চাকরি অথবা উচ্চশিক্ষার বৃত্তির হাতছানি| নিরন্তর অভ্যাসের মাধ্যমে নিজের যুক্তিশৃঙ্খলকে করে তুলতে হবে ক্ষুরধার, তবে এটাও ঠিক যে যুক্তি বা বুদ্ধি কাউকে শেখানো সম্ভব নয়, যুক্তি বা বুদ্ধি নিয়েই মানুষ জন্মায়| হয়তো সঠিক চর্চার অভাবে সেগুলি ঝিমিয়ে থাকে, তাই সেগুলিকে নাড়াচাড়া দেবার প্রয়োজন অবশ্যই| আপনি হয়তো ভাবছেন আপনার সামনে কোনো বৃত্তি বা চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বা প্রয়োজনিয়তাই নেই, তাহলে আর কেন আপনি এই ধরণের সাধারণ বুদ্ধি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাবেন| এক্ষেত্রে বলবো যদি আপনার জীবনে অন্য কোনো কঠিন চ্যালেঞ্জ না থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি এই ধরণের যৌক্তিক সমস্যাগুলি নিয়ে চর্চা করুন, চ্যালেঞ্জহীন ম্যাড়ম্যাড়ে জীবন শুকনো আমসির মতো| সাধারণ বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত বহ সমস্যার বই বাজারে পাওয়া যায়| চটপট সেইসব বই কিনে লেগে পড়ুন বিশ্লেষণে| আপনি যে পেশাতেই থাকুন না কেন মনে রাখবেন শরীরের যেমন খাদ্য, পানীয় আর ব্যায়াম জরুরি ঠিক তেমনই মস্তিষ্কেরও তা প্রয়োজন| হয়ে উঠুন যুক্তিবাদী ধুরন্ধর| সেই যুক্তি কাজে লাগান আপনার নিজের পেশায় আর পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়|