mRNA থেরাপির মাধ্যমে ইঁদুরের চিনাবাদাম থেকে হওয়া অ্যালার্জি প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

mRNA থেরাপির মাধ্যমে ইঁদুরের চিনাবাদাম থেকে হওয়া অ্যালার্জি প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

অ্যালার্জেন মানুষের শরীরে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে। ধুলোবালি, ফুলের রেণু থেকে শুরু করে খাবারদাবার , কীট পতঙ্গ প্রভৃতি যে কোনো জিনিস থেকেই অ্যালার্জি হতে পারে। এই অ্যালার্জেন হল এক ধরনের অ্যান্টিজেন। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, এই অ্যান্টিজেন বা অ্যালার্জেনটিকে শরীরের বাইরের বস্তু বা বিপজ্জনক হিসাবে চিহ্নিত করে। অতএব, শরীর এই অ্যালার্জেনের বিরুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করার জন্য এক ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি করে প্রতিক্রিয়া দেখায়। এর ফলে আমাদের অ্যালার্জির উপসর্গ দেখা দেয়।
চিনাবাদাম- এমন একটা খাবার যা থেকে বহু মানুষের অ্যালার্জি হয় । এই অ্যালার্জি থেকে নিষ্কৃতি পেতে নতুন নতুন চিকিত্সা পদ্ধতি এবং দ্রুত নিরাময়ের জন্য বিজ্ঞানীরা বহু গবেষণা করে চলেছেন। এই রকমই এক নতুন গবেষণায় প্রযুক্তির মাধ্যমে ওষুধ ব্যবহারের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে যা একটা ছোট্টো ন্যানোপার্টিকেলের (এক মিটারের একশো কোটি ভাগের এক ভাগ) উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। গবেষণায় ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে এই ছোট্টো কণা বা ন্যানোপার্টিকেল চিনাবাদামের জন্য হওয়া অ্যালার্জি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। গবেষকদের মতে এই একই প্রতিক্রিয়া যদি মানুষের মধ্যেও সংঘটিত হয় তাহলে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে পরিবর্তন আসবে।
নতুন এই চিকিত্সা পদ্ধতির কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে এক খণ্ড প্রোটিন যাকে এপিটোপ বলা হয়। এই এপিটোপ অ্যান্টিজেনের অংশ যার সঙ্গে অ্যান্টিবডি যুক্ত হতে পারে। এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে এপিটোপটি মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ পদ্ধতিকে উদ্দীপিত করে এবং অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। অ্যালার্জেনের এই পরিবর্তিত সংস্করণ ব্যবহারের উদ্দেশ্য হল শরীরকে চিনা বাদামের মতো অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী খাবার বা বস্তুর সঙ্গে অভ্যস্ত করে তোলা।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজিস্ট আন্দ্রে নেলের মতে যদি সঠিক এপিটোপ সনাক্ত করা যায় তবে, মানুষের শরীরের ইমিউন মেকানিজম অ্যান্টিজেনের অন্যান্য অংশের প্রতিক্রিয়াকে বাধা দেয়। এইভাবে এপিটোপের অংশেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। আগের গবেষণায় একই কৌশল ব্যবহার করা হয়েছিল, কিন্তু এই পরীক্ষায়, গবেষকরা কিছু অতিরিক্ত উপাদান যোগ করেন : একটি চিনির অণু যা অ্যান্টিজেন-লড়াইকারী ইমিউন কোশের সাথে যুক্ত হয়ে এপিটোপে নির্দেশাবলী তৈরি করতে জৈবিক বার্তাবাহক mRNA ব্যবহার করে।
পরবর্তী ক্ষেত্রে গবেষকরা লিভারের উপর ন্যানোপার্টিকেল নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেন যে যেকোনো বিদেশী বস্তুর প্রতি লিভার অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায় না কারণ এখানেই অ্যান্টিজেন-উপস্থাপক কোশ রয়েছে যা শরীরকে এমনভাবে তৈরি করেছে যাতে সে আত্মরক্ষায় অতিরিক্ত অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হতে দেয় না। নেল আরও বলেন যে আগে কখনো mRNA (এমআরএনএ) অ্যালার্জিজনিত রোগের জন্য ব্যবহার করা হয়নি।
ইঁদুর নিয়ে একাধিক পরীক্ষায় দেখা যায় যে ন্যানোপার্টিকেলগুলো চিনাবাদামের জন্য হওয়া অ্যালার্জি কমাতে এবং শরীরে এমন পদার্থের উত্পাদন বাড়াতে সাহায্যে করে যা ভবিষ্যতে চিনাবাদামের প্রতি সহনশীলতা তৈরি করে। এই সব পদার্থগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিবডি, সাইটোকাইনস (অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়াতে গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন), এবং এনজাইম (প্রোটিন যা শরীরে বিশেষ রাসায়নিক বিক্রিয়া চালায়)।
গবেষকদের মতে mRNA –এর মাধ্যমে এই চিকিত্সা পদ্ধতি প্রশংসার দাবী রাখে, কারণ ওষুধটি অন্যান্য অ্যালার্জি, অটোইমিউন অসুস্থতা বা টাইপ ১ ডায়াবেটিসের চিকিত্সায়ও জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।